বলগোনায় ব্যাঙ্কের সামনে ফর্ম পূরণে ব্যস্ত শম্পা রুদ্র। ছবি: সুদিন মণ্ডল
‘লকডাউন’-এ বাবার দোকান বন্ধ। টান পড়েছে ভাঁড়ারে। সংসারের চাকা গড়াতে কলম ধরেছে মেয়ে।
ভাতারের বলগোনা বাজারের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নীচে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মুখে ওড়না বা রুমাল বেঁধে বসে গ্রাহকদের নানা ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শম্পা রুদ্র। পারিশ্রমিক বাবদ যে যা দিচ্ছেন, তা নিয়েই খুশি মনে ঘরে ফিরছে সে মেয়ে। মা পাপিয়া রুদ্র বলেন, ‘‘মাধ্যমিকে ৬২ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছিল মেয়ে। টিউশন দেওয়া, দু’টো বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমাদের। অথচ, ওই এখন সংসারের মা লক্ষ্মী।’’
বর্ধমান শহরে চায়ের দোকান রয়েছে শ্যামল রুদ্রর। এক মাস ধরে তার ঝাঁপ বন্ধ। মজুত টাকা, খাবারেও টান পড়েছে। অথচ, বাড়িতে চার জন। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘দোকান থেকে টেনেটুনে সংসার চলে যেত। লকডাউনের পরেও গচ্ছিত টাকা দিয়ে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এখন রেশনে চাল পেলেও আনুষঙ্গিক জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই। বাবার চিন্তা দেখেই আয় করার এই উপায় বার করে বড় মেয়ে।’’
শম্পা জানায়, অনেকেই ব্যাঙ্কের কাজে আসা মানুষজনকে সাহায্য করে আয় করেন। বিশেষত বয়স্ক, গ্রাম থেকে আসা অনেকেই ফর্ম পূরণ করতে ইতস্তত করেন। তাঁদের দেখেই সাহায্য করার কথা মাথায় আসে। সঙ্গে যে যা দেন, তার থেকে কিছুটা রোজগারও হয়। বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চাওয়া ওই কিশোরীর কথায়, ‘‘বুঝছিলাম কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু রোজগারের উপায় বার করতে পারছিলাম না। এখন কারও বাড়ি গিয়ে পড়ানো বা সাহায্য চাওয়ায় সম্ভব নয়। তাই মনে হল যেটুকু পড়াশোনা জানি, এটাই করতে পারি।’’
সপ্তাহখানেক ধরে ব্যাঙ্কের কাজ করতে দেখে শম্পাকে চিনেও ফেলেছেন অনেকে। বলগোনা বাজার এলাকার বাসিন্দা রানু বৈরাগ্য, অরূপ দত্তরা বলেন, “এখন বিভিন্ন রকমের ভাতা, পেনশন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে। এ ছাড়া, প্রচুর মানুষ নানা কাজে ব্যাঙ্কে আসেন। গ্রাহকদের একটা বড় অংশ ফর্ম পূরণ করতে থতমত খান। শম্পার মত কৃতী ছাত্রী ফর্ম পূরণ করে দেওয়ায় গ্রাহকদের সুবিধাই হচ্ছে।’’
প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় আলু সেদ্ধ, ভাত খেয়ে চারশো মিটার দূরে ব্যাঙ্কের সামনে হাজির হয়ে যায় শম্পা। পেন-খাতা নিয়ে বিকেল ৪টে পর্যন্ত কাজ করে একশো-দেড়শো টাকা রোজগারও হয়। বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বই নিয়ে পড়তে বসে সে।
ভাতারের মাধব হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত সোম বলেন, ‘‘নিয়মিত স্কুলে আসে শম্পা। মনযোগী ছাত্রী। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ রয়েছে। ওর পড়াশোনায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তা আমরা দেখব।’’