পুলিশের আর্জি। আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র
খাদ্যদ্রব্য, আনাজ-সহ নানা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য ‘বৃদ্ধি’ ও ‘ছদ্ম’ অভাব রুখতে শুক্রবার আরও কড়া পদক্ষেপ করতে শুরু করল পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। এ দিন সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন দোকানে আচমকা হানা দেন ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’-এর সদস্যেরা। কোনও ভাবেই যেন জিনিসপত্রের দাম বেশি না নেওয়া হয়, লোকজনকে সে ব্যাপারে সতর্ক করেন তাঁরা।
অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি জানিয়েছেন, জেলায় মোট ২০টি ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’ দুই পুরসভা ও আটটি ব্লক অঞ্চলে ঘুরছে। বাসিন্দারা কোনও অস্বাভাবিকতা দেখতে পেলেই তাঁরা যেন ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’-এর সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেন, সে আবেদনও করেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।
বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দোকান, বাজারগুলিতে অতিরিক্ত দাম নেওয়া ও ছদ্ম অভাবের অভিযোগ উঠেছিল। যেমন অভিযোগ উঠেছে আসানসোলের মূল বাজার, নিয়ামতপুর বাজার, রূপনারায়ণপুরের ডাবর মোড় লাগোয়া কয়েকটি দোকান, দুর্গাপুর বিটু বাজার, এমএএমসি বাজার অঞ্চল। এ সব অঞ্চলে ছোট দোকানদারদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে, গ্রামাঞ্চল ও পাড়ার দোকানে সামগ্রী অমিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। সেই সঙ্গে অনেক বিক্রেতার অভিযোগ, অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জিনিস নিয়ে যাচ্ছেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘এই সব অভিযোগ আসার পরেই, ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’কে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। এই অঞ্চলের প্রত্যেক দোকানিকে জিনিসপত্রের দাম বোর্ডে লিখে দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, জেলার কোথাও যাতে আনাজ ও অন্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর গাড়ি না আটকানো হয় সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষ যেন ভয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সামগ্রী কিনে মজুত করে না রাখেন—সে প্রচারও চালানো হচ্ছে।
এ দিকে, ভিড় এড়াতে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকছে। তার মধ্যে খুচরো কেনাকাটা চলছে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এত কিছুর পরেও অনেক বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা, কেউই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছেন না। জনে-জনে এবং মাইকিং করে বোঝানোর পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দুর্গাপুরের বাঁকুড়া মোড়ের কাছে থাকা সেন মার্কেটের সহ-সভাপতি শিপুল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘করোনার সংক্রমণের আতঙ্কে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার থেকে আপাতত কয়েকদিনের জন্য বাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
একই পরিস্থিতি বেনাচিতি বাজারেও। এ দিন বেনাচিতি বাজার পরিদর্শন করেন দুর্গাপুর পুরসভার কর্তারা। পরিস্থিতি দেখে তাঁরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার আনাজ ও মাছের বাজার ফাঁকা মাঠে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। পুরসভার কমিশনার পুষ্পেন্দু মিত্র জানিয়েছেন, আজ, শনিবার থেকে বেনাচিতির আনাজ বাজার দেশবন্ধুনগর মাঠে ও মাছবাজার দিশারি ক্লাবের মাঠে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। মাইকিং করে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরসভার কমিশনার।
মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলে বলেন, ‘‘এত নিয়ম করার পরেও এক সঙ্গে একই সময়ে বহু মানুষ বাজারে চলে আসছেন। অনেকে বেশি জিনিস কিনে ঘরে মজুত করে রাখছেন বলে খবর পাচ্ছি। তাই ফের সকলের কাছে সহযোগিতার আর্জি জানাচ্ছি।’’ করোনা-সংক্রমণ রুখতে সকলের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসকও। সরকারি নির্দেশিকা না মানলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।