ঝড়ের আশঙ্কায় নৌকা শক্ত করে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা। বর্ধমান ২ ব্লকে দামোদরে। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ধেয়ে আসার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ২৬ ও ২৭ মে জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহওয়া দফতর সূত্রের খবর। বিপর্যয় মোকাবিলায় ইতিমধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনও কন্ট্রোল রুম (০৩৪২-২৬৬৫০৯২) চালু করেছে। শনিবার থেকে জেলার প্রতিটি ব্লক ও পুর এলাকাতেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
দুর্যোগ-পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি করোনা-বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও ঢিলেমি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা। তিনি বলেন, ‘‘ঘুর্ণিঝড়ের জন্য যে পরিস্থিতিই আসুক, করোনা-বিধি আলগা করা যাবে না। প্রতিটি ‘ফ্লাড শেল্টারে’ জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে। সিভিক ডিফেন্স ভলেন্টিয়ার বা বিপর্যয় মোকাবিলায় যাঁরা দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে পিপিই কিট ব্যবহার করতে হবে।’’
জেলা প্রশাসন জানায়, গত বৃহস্পতিবার জেলাশাসক প্রত্যেক মহকুমাশাসক ও পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিকদের চিঠি দিয়ে শনিবার থেকে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশ দেন। শুক্রবার পর্যন্ত তা খোলা থাকবে। সেখানে প্রশিক্ষিত পাঁচ-ছ’জন সিভিল ডিভেন্স ভলান্টিয়ার নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ‘ইয়াস’ মোকাবিলার জন্য পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বৈঠক করা হয়েছে। জেলায় ৪৯টি ‘ফ্লাড শেল্টার’ রয়েছে। সেগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে ত্রাণ শিবির চালু করতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অনির্বাণ কোলে বলেন, ‘‘প্রতিটি ব্লকে বিপর্যয় মোকাবিলার দল থাকছে। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীতে কোনও বিপর্যয় হলে জেলা থেকে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সে জন্য প্রতি মহকুমায় একটি বিশেষ দল তৈরি রাখা হয়েছে।
আমপানের মতো এই ঝড়েও বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা বেহাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা। সে কথা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ বিভাগের আঞ্চলিক (বর্ধমান) দফতর থেকে কয়েকটি পঞ্চায়েত ধরে এলাকা ভাগ করা হয়েছে। সেখানে ট্রান্সফর্মার-সহ বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ঠিকাদার গোষ্ঠীদেরও বিপর্যয় মোকাবিলায় কোন এলাকায় কারা দায়িত্বে থাকবেন, তা জানানো হয়েছে। দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার রাজু মণ্ডল বলেন, ‘‘আগের চেয়ে অনেক বেশি লোক নামানো হবে। এ বার গ্রামীণ এলাকাতেও রাতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়লে তা কেটে সরাতে গিয়ে দেরির অভিযোগ ওঠে নানা সময়ে। তাতে রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকায় সমস্যা হয়। সে কথা উল্লেখ করে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জেলা প্রশাসনের কাছে নজর দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘ঝড় থেমে যাওয়ার পরেও গাছ পড়ে থাকায় মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। সে কথা জেলা প্রশাসনকে বলেছি।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে গাছ কাটা হবে। এ ছাড়া দ্রুত গাছ কাটার জন্য লোক নিয়োগ করা হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে যাতে ঘাটতি না হয়, সে জন্য জেলার প্রতিটি ব্লকে ‘ক্যুইক রেসপন্স টিম’ (কিউআরটি) গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক-নার্সদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ যাতে নিচু এলাকা পর্যন্ত পৌঁছয়, সে জন্যও স্বাস্থ্য দফতর ব্লক হাসপাতালে তা সরবরাহ করেছে।
ঘূর্ণিঝড় এলে সেই সময়ে ভ্যাকসিন দেওয়া কি বন্ধ থাকবে? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘কোথাও ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ থাকবে না। প্রতিটি জায়গা খোলা থাকবে। মানুষ আসতে পারলেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।’’ জেলার যে সব ‘কোল্ড চেনে’ ভ্যাকসিন রাখা হচ্ছে, সে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেই হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর চিঠি দিয়েছে। সেগুলিতে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলে প্রণববাবু জানান।