প্রতীকী ছবি।
পড়শিদের অনেকে তাঁদের দূরে ঠেলেছিলেন। কল থেকে পানীয় জল নেওয়াও ‘নিষিদ্ধ’ হয়ে গিয়েছিল। দিন কাটাতে হয়েছে চরম সমস্যায়। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে, এমন নানা অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। এমনকি, রোগমুক্ত হওয়ার পরে, এখনও গ্রামের অনেকে এড়িয়ে চলেন বলে তাঁদের দাবি। এই রকম কয়েকজন সেরে ওঠা করোনা-আক্রান্তকে নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ‘কোভিড যোদ্ধা ক্লাব’ গড়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই ক্লাবের সদস্যদের করোনা-আক্রান্তদের সাহায্য করা এবং মনোবল বাড়াতে কাজে লাগানো হবে।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন, জেলার এমন কয়েকজন মানুষকে নিয়ে ‘কোভিড যোদ্ধা ক্লাব’ গঠন করা হয়েছে। ওই ক্লাবের সদস্যদের আমরা ‘কোভিড’ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে লাগানোর কথা ভেবেছি।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, এখনও পর্যন্ত ওই ক্লাবের সদস্য হিসেবে ২৫-২৬ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সমস্যাসঙ্কুল পরিবেশে করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন, নানা বাধা তোয়াক্কা না করে মনের জোর রেখে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, এমন কয়েকজনকে সামনে রেখে এই ক্লাব গড়া হয়েছে। অন্য সংক্রমিত রোগীকে নিজেদের লড়াইয়ের কথা শোনাবেন তাঁরা, যাতে ওই রোগীরা মনের জোর পান।
চিকিৎসকদের নিয়ে তৈরি সমন্বয় কমিটির সদস্য বিজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনা-আক্রান্তেরা যতটা না শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়ছেন, তার চেয়ে বেশি মানসিক আঘাত পাচ্ছেন। মানসিক ভাবে তাঁদের সুস্থ রাখা বেশি প্রয়োজন।’’ প্রশাসনের একাংশের দাবি, কয়েকমাস কেটে গেলেও করোনা নিয়ে আমজনতার মধ্যে ভয় কাটেনি। সে জন্য নানা এলাকায় অনেক বাসিন্দার মধ্যেই করোনা-আক্রান্তকে ‘অন্য দৃষ্টি’তে দেখার প্রবণতা রয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ভুল বোঝাবুঝির ঘটনাও ঘটছে। সাধারণ মৃত্যু নিয়েও অহেতুক তিক্ততার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সে সব এড়াতেই ‘কোভিড যোদ্ধা ক্লাব’ কাজ করবে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানান।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য) রজত নন্দ বলেন, ‘‘পাঁচ জন করোনা-যোদ্ধাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে বসে অন্য করোনা-আক্রান্তদের সমস্যা শুনে ফোনে উত্তর দেবেন। তাতে করোনা-আক্রান্তদের মনে অজানা ভয় কেটে যাবে বলে আশা করছি।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই সদস্যেরা ‘পিপিই’ পরে কোভিড হাসপাতাল, সেফ হোম বা নিভৃতবাসে থাকা আক্রান্তদের কাছে গিয়ে কথা বলবেন। তাঁদের খাবার দেওয়া, ওয়ার্ডে ছোটখাট কাজ, রোগীদের কাউন্সেলিংয়ের মতো কাজ করবেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘যে সব করোনা-যোদ্ধা স্বেচ্ছায় কাজ করতে আসবেন, তাঁদের ওই দলের সদস্য করা হবে। কাজ করলে তাঁরা পারিশ্রমিকও পাবেন। অনেকেই কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)