প্রতীকী ছবি।
বাঁশের ব্যারিকেড করে এলাকা গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও ‘হোম আইসোলেশন’-এ থাকা সংক্রমিত ব্যক্তি বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন, কোথাও রাস্তার কল থেকে পানীয় জল নিতে দেখা যাচ্ছে— ফোনে এ রকম বহু অভিযোগ মিলছে, দাবি জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। বিশেষত বর্ধমান শহরে এই ধরনের অনেক অভিযোগ উঠে আসছে বলে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরের তরফেও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আবার প্রশাসনের বিরুদ্ধেও নজরদারিতে বা জীবাণুনাশক ছড়ানোয় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। এই প্রেক্ষিতে বর্ধমান শহরের প্রতিটি পাড়ায় ‘নজরদারি কমিটি’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বুধবার জানাল জেলা প্রশাসন। যে সব পঞ্চায়েতে দশ জনের বেশি করোনা-আক্রান্ত রয়েছেন সেখানেও এমন কমিটি গঠনের কথা ভেবেছে প্রশাসন।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘জেলার মোট করোনা-আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ বর্ধমান শহরের বাসিন্দা। মৃত্যুর হারও বর্ধমান শহরে বেশি। সে জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পাড়ায়-পাড়ায় নজরদারি কমিটি গঠন করা হতে চলেছে।’’ তিনি জানান, ওই কমিটিতে স্থানীয় ক্লাবের সদস্য, পাড়ার বিশিষ্টজন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী, পাড়ার তরুণ-তরুণীরা থাকবেন। কমিটির হাতে স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক-সহ নানা সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা হবে। তবে কাটোয়া, কালনার মতো জেলার অন্য শহরে এখনই এই কমিটি গঠন করা হচ্ছে না বলে জেলাশাসক জানান।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, সোমবার পর্যন্ত বর্ধমান শহরে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৫২১। তার মধ্যে ১৬০ জন ‘অ্যাক্টিভ’ রোগী। জেলার অন্য নানা এলাকার তুলনায় সুস্থতার হার অনেকটা কম। আবার, জেলার মোট ৩৮ জন মৃতের মধ্যে ২৫ জনই বর্ধমান শহরের। সুস্থতার হারে এগিয়ে রয়েছে ভাতার, কাটোয়া পুরসভা ও জামালপুর। পিছিয়ে থাকার তালিকায় বর্ধমানের পরেই রয়েছে মেমারি ১ ও খণ্ডঘোষ ব্লক।
জেলায় করোনা-আক্রান্তদের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বর্ধমান শহরের। কেন? স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন, পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতায়াত বর্ধমান শহরের উপরে নির্ভর করেছে। প্রাথমিক সংস্পর্শদের খোঁজ মেলার পরে, লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছিল। সেই সময়ে শহরে ওই ব্যক্তিরা ঘুরে বেড়িয়েছেন। কলকাতা-সহ গোটা পাঁচেক জেলার সঙ্গে বর্ধমান শহরের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। বহিরাগতেরা অবাধে আসা-যাওয়া করেছেন। বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘনবসতি রয়েছে। শহরে এ সবের জেরেই বেশি সংক্রমণ বলে ধারণা কর্তাদের।
জেলা প্রশাসনের দাবি, বিভিন্ন এলাকা বা সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, সংক্রমণ রুখতে নজরদারি ঠিকমতো হচ্ছে না। এলাকায় জীবাণুনাশক ছড়ানো হচ্ছে না। গণ্ডিবদ্ধ এলাকাতেও অবাধে লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন নজর রাখছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা তো নজর রাখা সম্ভব নয়। আবার প্রয়োজনমাফিক জীবাণুনাশকও স্প্রে করার ক্ষেত্রেও খামতি থাকতে পারে। পাড়ায় নজরদারি কমিটি এই সব খামতিগুলি দেখবে। বাড়ি-বাড়ি ঘুরে প্রচারও করবে। সে জন্য যাবতীয় সাহায্য আমরা করব।’’
তবে গ্রামীণ এলাকা নিয়ে ক্রমে চিন্তা বাড়ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, দেড় মাস আগে ১১৪টি পঞ্চায়েত করোনা-মুক্ত ছিল। এক সপ্তাহ আগে সেই সংখ্যা ছিল ৭৪। বুধবারই তা ৩৫-এ দাঁড়িয়েছে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘এই তথ্য আমাদের কাছে চিন্তার। সে জন্য করোনা-মুক্ত এলাকায় আরও বেশি করে নজরদারি চালানো, পরীক্ষা করার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ গলসি ১ ব্লকের কৃষ্ণরামপুর, মঙ্গলকোটের কৈচর ১, মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রাম, পিপলনের মতো পঞ্চায়েতে এখনও করোনা সংক্রমণের হদিস মেলেনি।