এসডিপিও-র অফিসে বাম, কংগ্রেস নেতারা। নিজস্ব চিত্র।
কখনও নেতা-কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর, কখনও জোর করে পার্টি অফিস বন্ধ করে দেওয়া— ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই একের পর হামলায় বিধ্বস্ত কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোটের বহু গ্রাম। অনেকে ঘরেও ফিরতে পারছেন না, এমনই অভিযোগ তুলে ওই দুই বিধানসভা এলাকায় শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রাখার দাবিতে এসডিপিও-র কাছে স্মারকলিপি দিলেন বাম-কংগ্রেস নেতারা।
বাম নেতাদের অভিযোগ, ২১শে এপ্রিল, ভোটের দিন সন্ধ্যা নাগাদ কেতুগ্রামের কুচুটিয়া, মোরগ্রাম, আরনা এলাকায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালানো হয়। ১৯ মে গণনা কেন্দ্র, কাটোয়া কলেজ থেকে বেরোনোর পরে সিপিএম এজেন্ট ফারুক মির্জাকে মারধর করা হয়। কেতুগ্রামের বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে রেশন কার্ড ও সবুজ সাথী প্রকল্পে পাওয়া সাইকেল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। এ ছাড়াও বহু পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। সবক’টিতেই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। স্মারকিলিতে দাবি করা হয়েছে, কেতুগ্রাম থানা এলাকার বেরুগ্রাম, আগরডাঙা, মুরগ্রাম গোপালপুর, রাজু্র, খাঞ্জি, পান্ডুগ্রাম, টিকুরি, হাটপাড়া, বাকলসা, কুলাই, নওয়াপাড়া, চাকদা, ভান্ডারগড়িয়া, পালিটা, তিলডাঙা, রতনপুর ইত্যাদি গ্রামে কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা হয়েছে। কোথাও বাড়িঘর, ধানের গোলা ভাঙচুর করা হয়েছে। কোথাও বাড়িতে ঢুকে ট্রাক্টর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মহিলা সমিতির নেত্রী সাধনা মল্লিকের কথায়, ‘‘পালিটা, গুড়পাড়াতে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। রতনপুরে ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। মেয়েরাও মার খেয়েছ। হামলার মুখে পড়েছেন বহরান জোনাল কমিটির সদস্য প্রশান্ত ভট্টাচার্য। তাঁর বাড়িতে বোমা মারা হয়েছে, বাড়ির গ্রিলের কাচ ভেঙে গিয়েছে।’’ মঙ্গলকোটের সিপিএম জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরেরও অভিযোগ, ‘‘গ্রামে গ্রামে হামলা চলছে। আমাকেও বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ শিমুলিয়া, ঠেঙাপাড়া এলাকার প্রায় ৫০-৬০ জন ঘরছাড়া, বিজয় মিছিলের নামে তাণ্ডব চালানো হচ্ছে বলেও তাঁর দাবি। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, নিগন বাসস্ট্যান্ডে পুতুল মণ্ডল নামে এক ব্যবসায়ীর ধানের আড়ত ও সাবির শেখের গ্রিল ফ্যাক্টরি খুলতে দিচ্ছে না তৃণমূল কর্মীরা। মঙ্গলকোট সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য টুইলো টুডুকে গ্রামে থাকতে গেলে টাকা চাওয়া হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। কংগ্রেস কর্মী তথা শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েত প্রধান দীপক মজুমদারের কথায়, ‘‘আমাদের কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। কেতুগ্রামের আরনাতে কংগ্রেস কর্মী তোতা মিঞাকে ভয় দেখিয়ে গ্রামছাড়া করেছে তৃণমূল কর্মীরা।’’
যদিও কোনও অভিযোগই মানতে চাননি কাটোয়ার সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘সিপিএমই সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। কিন্তু সেগুলো এত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দলনেএী বলেছেন সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে। সব কর্মীদের চুপচাপ থাকতে বলা হয়েছে। যাঁরা বিশৃঙ্ক্ষলা ছড়াচ্ছেন তাঁরা দলের কেউ নন।’’ কাটোয়া মহকুমার এসডিপিও সচিন মাক্কার জানান, যে সমস্ত গ্রামে সন্ত্রাসের অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে পুলিশি নিাপত্তা বাড়ানো হবে। কুইনি, কৈথনে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। এ ছাড়াও শহরের মধ্যে কোনও ঝামেলা হলে তা মোকাবিলার জন্য ওসি ট্রাফিকের সাথেও কথা বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ দিনই আবার মেমারি ২ ব্লক টিএমসিপি-র কার্যকরী সভাপতি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে দলেরই জেলা সভাপিতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন প্রসূন। যদিও অভিযোগ মানতে চাননি বাপ্পাদিত্য।