—প্রতীকী চিত্র।
মনোনয়ন-পর্বের পরে দেখা যাচ্ছে, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী সংখ্যার নিরিখে পশ্চিম বর্ধমানে কংগ্রেস তৃণমূল তো বটেই, বাম, বিজেপির থেকেও বহু যোজন পিছিয়ে। জেলায় বাম-কংগ্রেস জোট বা আসন সমঝোতাও কার্যত ভেস্তে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যে সব এলাকায় কংগ্রেসের প্রার্থী নেই, কিন্তু ভোট আছে বলে দাবি, সে জায়গাগুলিতে হাত শিবিরের সমর্থকদের ভোট কোন দিকে যায়, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। বিশেষ ভাবে এ নিয়ে ঝাঁপাতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল ও সিপিএমকে।
ঘটনা হল, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ স্তরে বাম ও কংগ্রেসের প্রার্থী রয়েছেন যথাক্রমে ৬৫৪ ও ৪১, ১৪৩ ও ১০ জন এবং ১৮ ও ১০ জন।
তবে জোট ‘ভেস্তে’ গিয়েছে, সে কথা বলতে নারাজ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। ঘটনা হল, সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকেই ঠিক হয়েছিল, কংগ্রেসের জোট করেই লড়তে আগ্রহী দল। তবে বিষয়টি একেবারেই স্থানীয় নেতৃত্বের উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়। দলের এই অবস্থানেরই কার্যত প্রতিধ্বনি গৌরাঙ্গের বক্তব্যে। তিনি বলছেন, “কংগ্রেসের নিচুতলার নেতা, কর্মীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। দেওয়াল লেখা থেকে ভোট প্রচার, দু’দলের নেতা কর্মীরা এক সঙ্গেই করছেন।” প্রসঙ্গত, বাম-কংগ্রেস-আইএসএফের আসন সমঝোতায় ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বারাবনি-সহ তিনটি আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হয়েছিল। মূলত এই বারাবনিরই দু’টি ব্লক সালানপুর ও বারাবনির যে আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী নেই, সেখানে কংগ্রেসের ভোট সিপিএম প্রার্থীদের দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন গৌরাঙ্গ। পাশাপাশি, সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, অন্য পঞ্চায়েতগুলিতে যেখানে বামেদের প্রার্থী নেই সেখানে কংগ্রেসকে সমর্থন করা হবে।
তবে কংগ্রেস সমর্থকদের ভোট নিয়ে যে সিপিএম-ই আহ্বান জানাচ্ছে, তা নয়। তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, অন্ডাল, সালানপুর, কাঁকসা, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জে কংগ্রেসের ভোটারদের কাছে তাঁদের প্রার্থীকে সমর্থনের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই ব্লকগুলিতে সিপিএমের প্রার্থীরাও রয়েছেন। তৃণমূলের সালানপুরের ব্লক সম্পাদক ভোলা সিংহ বলেন, “যাঁরা প্রকৃত অর্থে কংগ্রেস করেন, তাঁরা অতীতে সিপিএমের সন্ত্রাসকে মনে রেখেছেন। ওঁরা কোনও ভাবেই সিপিএমকে ভোট দেবেন না। ওঁদের ভোট তৃণমূলের দিকেই আসবে। আমরা এই ভোটারদের কাছে সিপিএমের অতীতটা মনে করার জন্য অনুরোধ করছি।” তবে কংগ্রেসের ভোট তাঁদের দরকার নেই বলেই দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তবে পরক্ষণেই তাঁর সংযোজন: “গত বিধানসভা ভোটে জোটের পরেও কংগ্রেসকে ভোট দেয়নি সিপিএম। আশা করি, ওঁরা সেটা ভোলেননি।”
এ দিকে, রাজনৈতিক মহলের একাংশ আবার বলছে, কংগ্রেসের ভোটপ্রাপ্তি কার্যত তলানিতে ঠেকেছে বারাবনি-সহ জেলাতেই। অতীত ভোটের পরিসংখ্যান ঘেঁটে ওই মহলটি বলছে, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে আসন সমঝোতার পরেও, বারাবনিতে কংগ্রেসের ভোটপ্রাপ্তি ছিল ১০ শতাংশের নীচে। আবার আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস আলাদা ভাবে লড়ে। বারাবনিতে কংগ্রেস প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ২৭৯৫টি, নোটার থেকে যা মাত্র ৫৫২টি বেশি! ফলে, এই যেখানে কংগ্রেসের ভোটপ্রাপ্তির হার, সেই ভোট যারই ঝুলিতে যাক, তাতে আদৌ কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান ওই মহলটি।
যদিও, তাঁদের সমর্থন কমছে, তা মানতে নারাজ কংগ্রেস নেতৃত্ব। পাশাপাশি, সিপিএমের ডাকেও স্পষ্ট ভাবে সাড়া দিতে দেখা যায়নি জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বকে। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর অবশ্য বক্তব্য, “যদি দেখা যায়, আমাদের সম্ভাব্য জেতা প্রার্থীদের সিপিএম সমর্থন করছে, তবে আমরাও পাল্টা সমর্থনের হাত বাড়াব।” দেবেশের তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন: “কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের বিরুদ্ধেই আমাদের প্রচার চলছে। এই অবস্থায় মানুষ কাকে ভোট দেবেন, সেটা তাঁদের বিবেকের উপরেই ছাড়তে হয়।” — অর্থাৎ এক কথায় প্রার্থিহীন এলাকায় কংগ্রেসের সমর্থন কোন দিকে, তা নিয়ে জল্পনা জিইয়েই থাকছে।