স্কুলের দ্বন্দ্বে আক্রান্ত শিক্ষিকা

প্রধান শিক্ষিকার উপরে হামলায় নাম জড়াল শাসকদলের। মঙ্গলবার ওই অভিযোগ উঠেছে পূর্বস্থলী সাবিত্রী বালিকা বিদ্যালয়ে। মোবাইল দিয়ে তাঁর কপালে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমি পালের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৯
Share:

আহত প্রধান শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র।

প্রধান শিক্ষিকার উপরে হামলায় নাম জড়াল শাসকদলের। মঙ্গলবার ওই অভিযোগ উঠেছে পূর্বস্থলী সাবিত্রী বালিকা বিদ্যালয়ে। মোবাইল দিয়ে তাঁর কপালে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমি পালের। তবে তাঁর বিরুদ্ধে চাবি ছুড়ে মারার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন ওই স্কুলেরই অন্য এক শিক্ষিকা।

Advertisement

মৌসুমিদেবীর সঙ্গে সাবিত্রী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের একাংশের বিবাদ দীর্ঘদিনের। নানা সময়ে বিবাদ মেটাতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপও হয়েছে। এমনকী, স্কুল পরিচালন সমিতির নতুন সভাপতি নিয়োগ নিয়েও এই স্কুলে তৈরি হয়েছে দ্বন্দ্ব। নতুন সভাপতি আশিস কুমার দে-র নিয়োগ অবৈধ দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন মৌসুমিদেবী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আশিসবাবুও। তিনি পুলিশকে জানান, তাঁকে না জানিয়ে আগের পরিচালন সমিতির সভাপতিকে দিয়ে অন্যায় ভাবে স্কুলের টাকা তুলেছেন প্রধান শিক্ষিকা।

এরই মধ্যে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রতি অশালীন আচরণ করা হয়েছে অভিযোগে ১০ জানুয়ারি থেকে মৌসুমিদেবী স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন। তিনি পূর্বস্থলীর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রধান পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্য বিপুল দাস-সহ পাঁচ জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে স্কুলে নানা প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেয়।

Advertisement

আশিসবাবুর করা অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বেশ কিছু নথিপত্র জোগাড় করতে স্কুলে আসে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ আসে। এ দিন স্কুলে এসেছিলেন প্রধান শিক্ষিকাও। পুলিশের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী তথ্য না দিতে পারায় তারা ফিরে যায়। অভিযোগ, এই সময় অন্য কিছু শিক্ষিকা আচমকাই মৌসুমিদেবীর কাছে তাঁর নিজের আয়কর সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে বসেন। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি আশিসবাবুর অভিযোগ, ‘‘উনি তথ্য না দিয়ে উল্টে চাবি ছুড়ে মারেন ইংরেজির এক শিক্ষিকাকে লক্ষ করে। তাতে তিনি চোট পান।’’ স্কুল সূত্রের খবর, দুপুর একটা নাগাদ সহ-শিক্ষিকারা প্রধান শিক্ষিকাকে তাঁর ঘরে তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরে তালা খুলে দেওয়া হলেও শিক্ষিকাদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।

বিকেল সাড়ে চারটের পর স্কুলে পোঁছন তৃণমূল নেতা তপনবাবু, বিপুলবাবুস পঙ্কজবাবুরা। প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ, সেই সময় নিজের ঘরে বসে শিক্ষিকাদের বিক্ষোভের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নানা জায়গায় ফোন করছিলেন। আচমকা প্রাক্তন বিধায়ক ঘরে ঢুকে মোবাইল দিয়ে তাঁর কপালে সজোরে আঘাত করেন। তাঁর কপাল ফেটে যায়। মারধরে জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল দাসও জড়িত ছিলেন বলে মৌসুমিদেবীর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘কোন রকমে ঘর থেকে ছুটে বেরোই। না হলে আজ আমার কপালে আরও বড় ফাঁড়া লেখা ছিল।’’ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তপনবাবু বলেন, ‘‘আমি এ দিন ওই স্কুলে যাইনি। সারা দিন দলের এক কর্মীর স্মরণসভায় ছিলাম। মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

তবে, ঘটনার নিন্দা করেছেন পূর্বস্থলী উত্তরের সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে এক জন প্রধান শিক্ষিক। সাবিত্রী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার উপরে যে ভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।’’ তাঁর আরও দাবি, ওই প্রধান শিক্ষিকা কড়া হাতে স্কুল পরিচালনা করতে গিয়েছিলেন বলেই অন্য শিক্ষিকা ও পরিচালন সমিতির রোষের মুখে পড়েছেন। আশিসবাবু এবং সহ-শিক্ষিকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গণ্ডগোলের খবর পেয়ে বিকেলের দিকে ফের পুলিশ যায় স্কুলে। পরিস্থিতি সামলাতে সন্ধ্যায় সেখানে যান বিডিও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশের কাছে তপনবাবুদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেননি মৌসুমিদেবী। মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘ওই স্কুলের পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement