বুলডোজ়ার নিয়ে চলছে উচ্ছেদ। চিত্তরঞ্জন রেল শহরে সোমবার। নিজস্ব চিত্র
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, চিত্তরঞ্জন রেল শহরে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদে নামার কথা জানাল চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (সিএলডব্লিউ)। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় অভিযান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে কিছুটা ‘বাধা’র মুখে পড়তে হয়। কিন্তু পরে, উচ্ছেদ-অভিযান নির্বিঘ্নেই হয়। যদিও, এই উচ্ছেদের তীব্র বিরোধিতা করেছে আইএনটিইউসি।
এ দিন সকাল ১১টায় বুলডোজ়ার নিয়ে রেল আবাসন কলোনির ২৬ নম্বর রাস্তায় পৌঁছন সিএলডব্লিউ-র ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জমিদারি বিভাগের আধিকারিকেরা। ছিল আরপিএফ-এর বাহিনীও। সেখানে রেল আবাসনের পিছনের ফাঁকা মাঠে একাধিক অবৈধ নির্মাণ তৈরি করে কয়েক বছর ধরে বহিরাগতরা বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। আধিকারিক ও বাহিনীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দাদের একাংশ। ফলে, কিছুক্ষণের জন্য অভিযান থমকে যায়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে বিক্ষোভ। পরে আরও বেশি সংখ্যায় আরপিএফ-এর বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে, ‘বিক্ষোভকারীদের’ ঘর থেকে জিনিসপত্র বাইরে বার করে, বুলডোজ়ার চালিয়ে নির্মাণ ভেঙে দেয় সিএলডব্লিউ। বিক্ষোভকারীদের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এ দিকে, কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, রেল আবাসন এলাকার নানা জায়গায় এমন বহু নির্মাণ গড়ে উঠেছে। সকলেই বহিরাগত। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম, জামতাড়ার বাসিন্দা। এদের সঙ্গে রেল কারখানার কোনও সম্পর্ক নেই। রেলের জমিতে অবৈধ নির্মাণ তুলে রেলের জল-বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাঁরা বসবাস করছিলেন বলে দাবি। আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, রেল শহরের ৫৭ ও ২১ নম্বর রাস্তাতেও একই ভাবে রেলের সঙ্গে সম্পর্কহীন বহিরাগতরা বহু বছর ধরে বসবাস করছেন। আগামী দিনে ওই দুই এলাকাতেও উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ২০০৯-এর ৭ সেপ্টেম্বর রেল উচ্ছেদ অভিযানের নোটিস দিয়েছিল। কিন্তু জবরদখলকারীরা ওঠেননি বলে দাবি। এর পরে ২০১০-এর ৬ জানুয়ারি ফের নোটিস দেওয়া হয়। সে বারও কোনও লাভ হয়নি বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি। এর পরে, চলতি বছরের ২ জুন সংস্থার তরফে, ফের নোটিস দেওয়া হয় এবং জানানো হয়, ৩ জুলাইয়ের মধ্যে জায়গা খালি করতে হবে। তার পরেও, জবরদখলকারীরা না উঠে যাওয়ায় এ দিন পদক্ষেপ করা হয় বলে দাবি কারখানা কর্তৃপক্ষের।
এ দিকে, রেল শহরে এমন অভিযানের বিরোধিতায় আন্দোলন হবে বলে জানিয়েছেন উচ্ছেদ-নোটিস পাওয়া জনতার একাংশ। এই অভিযানের বিরোধিতা করেছেন সংস্থার আইএনটিইউসি-র সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিংহ। তিনি বলেন, “বর্ষার সময়ে পরিবারগুলিকে গৃহহীন করে অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে রেল। আমরা এই উচ্ছেদ চাইছি না।” পুরো বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সিএলডব্লিউ-র আধিকারিকেরা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক আধিকারিক বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই এই নির্মাণগুলি ভাঙা হচ্ছে। আগামী দিনেও উচ্ছেদ-অভিযান চলবে।”