West Bengal Panchayat Election 2023

প্রার্থী সংখ্যায় বিজেপির থেকে এগিয়ে বামেরা

জেলার আসানসোল লোকসভা আসন ২০১৪, ২০১৯, পর পর দু’বার দখল করেছিল বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে জেলার তিনটি আসনও পায় তারা।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩ ০৯:১৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। কিন্তু মনোনয়ন জমা এবং তার পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্বের পরেও দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম বর্ধমানে প্রার্থী সংখ্যায় তৃণমূল তো বটেই, বামের থেকেও পিছিয়ে বিজেপি। বিজেপি যদিও, এর জন্য তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করছে। তৃণমূল অভিযোগে আমল দেয়নি। কিন্তু কেন এমন পরিসংখ্যান, তা নিয়ে চর্চা চলছে জেলায়। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নিরিখে যেন দুই শিবিরের তুল্যমূল্য লড়াই চলছে।

Advertisement

এই জেলার আসানসোল লোকসভা আসন ২০১৪, ২০১৯, পর পর দু’বার দখল করেছিল বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে জেলার তিনটি আসনও পায় তারা। সে বারের ভোটে আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ, কুলটি— এই তিন কেন্দ্রে বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ জোটের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও দেখা গিয়েছিল, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির স্তরে বিজেপি সিপিএমের তুলনায়যথাক্রমে ২১৬টি এবং ২০টি কম মনোনয়ন জমা দেয়।জেলা পরিষদে দুই শিবিরই সম সংখ্যক ১৮টি মনোনয়নপত্র জমা করে। এখন মনোনয়ন প্রত্যাহারে পঞ্চায়েত স্তরে সিপিএম এগিয়ে থাকলেও, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত স্তরে যেখানে বিজেপির ৬৩ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন, সেখানে বামের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৯৭।

পঞ্চায়েত সমিতির স্তরে অবশ্য সিপিএমের ১১ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও, বিজেপির ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ২০ জন। দিনের শেষে পরিসংখ্যান বলছে, ভোটের প্রার্থী সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে বাম। পঞ্চায়েতে বামের ৬৫৪ জন এবং বিজেপির ৪৭২ জন, পঞ্চায়েত সমিতিতে বামের ১৪৩ জন এবং বিজেপির ১১৪ জন ও জেলা পরিষদে দুই শিবিরেরই ১৮ জন করে প্রার্থী রয়েছেন।

Advertisement

কিন্তু কেন এই হাল? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি বড় অংশের মতে, ’১৯-এর লোকসভা ও ’২১-এর বিধানসভায় ‘সাফল্য’ পেলেও সংগঠন সে ভাবে দানা বাঁধেনি বিজেপির। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জেলা বিজেপির অন্যতম মুখ লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের নিজের গ্রামেরই একটি বুথে প্রার্থী দিতে পারেনি গেরুয়া শিবির।আবার বিজেপি যে দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশেষ ‘লড়াকু দল’ তৈরি করেছিল, তার অন্যতম মুখ জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে প্রশাসনের কাছে এলাকায় ‘সন্ত্রাসের’ জেরে প্রার্থী দিতে না পারার অভিযোগ করতে দেখা গিয়েছিল।পাশাপাশি, অন্তত ১০টি সাংগঠনিক মণ্ডলে কার্যকারিণী সভা করতে পারেনি বিজেপি।যদিও, এই পরিসংখ্যানকে একেবারেই আমল দিচ্ছে না বিজেপি।তাদের মতে সংগঠন নয়, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী শাসক দলের সন্ত্রাস। বিধানসভা ভোটের পরে সে জন্য অনেক নেতা, কর্মী ঘরছাড়া। যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের চাপ দেওয়া হয়েছে। অনেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরেওদাঁড়িয়েছেন। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “তৃণমূলের লাগাতার হিংসা ও সন্ত্রাস পেরিয়ে কর্মীদের অনেকেই আবার ফিরে আসছেন ময়দানে।পরিস্থিতি সাপেক্ষে ভাল সংখ্যক মনোনয়নই জমা পড়েছে। আমরা সাধ্য মতো সন্ত্রাসের প্রতিরোধ করছি।”

পাশাপাশি, বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, তাঁরাই প্রধান বিরোধী দল হওয়ায় সন্ত্রাসের সম্মুখীন তাঁদেরই বেশি হতে হচ্ছে। তা ছাড়া, এটি স্রেফ প্রার্থীর পরিসংখ্যান। ভোটপ্রাপ্তির নয়।

যদিও, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, “পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। সন্ত্রাসের প্রতিরোধও করা হচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছেন, আমরাই তৃণমূলের বিকল্প। এই পরিসংখ্যান তারই প্রতিফলন।”

সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “একেবারেই ভিত্তিহীন অভিযোগ। তা হলে এত এত বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়ল কী ভাবে?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement