বর্ধমানে গাছ-ফোঁটা দুই বোনের। নিজস্ব চিত্র।
রেকাবিতে সাজানো ফোঁটার চন্দন থেকে মঙ্গলদীপ পর্যন্ত ভাইফোঁটার আনুষঙ্গিক সব উপকরণ। শুধু মানুষের বদলে গাছকে ফোঁটা দিল বর্ধমানের দুই মুসলিম বালিকা। তাদের কোনও ভাই নেই। তাই বৃক্ষপ্রেমী বাবা-মায়ের উদ্যোগে এই অভিনব ফোঁটার অনুষ্ঠান হল পূর্ব বর্ধমানের মালিরবাগান এলাকায়। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রতিবেশীরাও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই এলাকার বাসিন্দা আবু আজাদ বৃক্ষপ্রেমী হিসাবেই পরিচিত। প্রতি বছরই পূর্ব বর্ধমান এবং আশপাশের জেলাগুলির বিভিন্ন এলাকায় তাঁর উদ্যোগে চারাগাছ বিতরণ হয়। নিজেও লাগিয়েছেন অনেক গাছ। তাঁর দুই ছোট মেয়ে গাছকে ফোঁটা দিয়েছে বৃহস্পতিবার।
আবু জানাচ্ছেন, তাঁর দুই মেয়ে আরভি এবং আরশি। আরভি বর্ধমানের একটি বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ছোট মেয়ে এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি, সে বাড়িতেই পড়ে মায়ের কাছে। আরভি তার স্কুলের বন্ধুদের থেকে শুনেছে ভাইকে ফোঁটা দিতে হয়। এর পর সে বাড়ি এসে বাবাকে প্রশ্ন করে, ‘‘আমাদের তো ভাই নেই, আমরা কাকে ফোঁটা দেব?’’
আজাদ কথায়, ‘‘প্রথমে আমি মেয়ের প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পাইনি। সত্যি তো ওদের ভাই নেই। তা হলে কাকে ফোঁটা দেবে? আমার স্ত্রীকে কথাটা বললাম। সে মাথা থেকে একটা সুন্দর ভাবনার কথা আমাকে বলল— গাছের থেকে পরম আপন ভাই আর কে হবে? তাই আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে ঠিক করলাম আমাদের মেয়েরা তাদের গাছ-ভাইকে ফোঁটা দেবে।’’
আজাদের স্ত্রী রেশমা খাতুনা বলেন, ‘‘আমাদের ফোঁটার চল নেই। কিন্তু মেয়ের আগ্রহের কাছে হার মেনেছি। গাছের চেয়ে আপন আর দীর্ঘদিনের সাথী আর কে হতে পারে? তাই গাছকেই ফোঁটা দিয়েছে ওরা।’’ আর ছোট্ট আরভি জানিয়েছে, এ বার থেকে গাছকে ভাই হিসেবেই দেখবে। তাদের যত্ন করবে। প্রতি বারই ফোঁটা দেবে গাছেদের।