প্রশাসনের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র
৩৭.১৫ ও ২৯.৮০ শতাংশ।— ক্লাসের ফার্স্ট বারাবনি ব্লকের ‘স্কোর’ এমনই! প্রশাসনের কর্তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য পাওয়া অনুদান খরচের নিরিখে এই ‘স্কোরকার্ড’-ই বলে দিচ্ছে ক্লাসের বাকি ছাত্রদের (অর্থাৎ অন্য ব্লকগুলির) অবস্থা। প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবার পর্যালোচনা বৈঠকে বিষয়টি সামনে এলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি নেতা লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘সরকারের হিসেবেই স্পষ্ট প্রশাসন উন্নয়নের কাজ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির মতে, ‘‘লকডাউন পরিস্থিতির জন্য কোথাও কোথাও কাজ করা যায়নি। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন। সময় গড়ালেই উন্নয়নের চাকাও আবার আগের মতোই গড়াবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবর্ষের (২০২০-২১) মে পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের তহবিল থেকে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা অনুদান এসেছে। কিন্তু খরচ হয়েছে মাত্র সাত কোটি টাকা (৯ শতাংশের কিছু বেশি)! বিভিন্ন ব্লকের বিডিও-দের কাছে খরচের এই হাল কেন, তা জানতে চান জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘টাকা খরচের অর্থ, গ্রামের মানুষের উন্নয়ন। এই সময়ে সেটা হওয়া আরও জরুরি। তবেই সাধারণ মানুষ প্রশাসনের উপরে আস্থা রাখতে পারবেন। তবে দ্রুত কাজ করতে গিয়ে স্বচ্ছতার অভাব যাতে না ঘটে, সে দিকেও নজর রাখতে হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার থেকে পাওয়া অনুদান খরচের নিরিখে সব থেকে এগিয়ে বারাবনি ব্লক। এই ব্লক দুই অনুদানের যথাক্রমে ৩৭.১৫ শতাংশ ও ২৯.৮০ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে। অথচ, রাজ্য সরকারের থেকে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা অনুদান এলেও সালানপুর ব্লক কোনও টাকা খরচ করতে পারেনি বলে জানা গিয়েছে। কেন এমনটা ঘটেছে, তা জানতে ওই ব্লকের থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন জেলাশাসক। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান খরচে বারাবনির পরেই রয়েছে সালানপুর ব্লক (৮.৬৬ শতাংশ)। এ ক্ষেত্রে জেলার আটটি ব্লকের মধ্যে সব থেকে পিছিয়ে জামুড়িয়া ব্লক। তারা কেন্দ্রীয় অনুদানের মাত্র ১.৩০ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে এখনও পর্যন্ত। যদিও রাজ্যের অনুদান খরচে জামুড়িয়া রয়েছে দু’নম্বরে।
কেন এই পরিস্থিতি? বিডিও (সালানপুর) তপন সরকার-সহ জেলার আটটি ব্লকের কর্তাদেরই দাবি, এর কারণ ‘লকডাউন’-এর জেরে এপ্রিল ও মে, এই দু’মাস কাজ না করতে পারা। তা হলে খরচ ‘আশাব্যঞ্জক’ না হলেও অন্যদের তুলনায় কী ভাবে এগিয়ে থাকল বারাবনি ব্লক, উঠেছে সে প্রশ্নও। বিডিও (বারাবনি) সুরজিৎ ঘোষের ব্যাখ্যা, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েতগুলিকে নিয়ে কাজের তালিকা, বরাদ্দ তৈরি করে তা প্রত্যেক পঞ্চায়েতকে ভাগ করে দেওয়া হয়। উপযুক্ত সময়ে দরপত্র ডাকা হয়েছিল বলেই কাজ কিছুটা হয়েছে। তবে আরও কাজ করতে হবে।’’
পাশাপাশি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মতে, জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতের খরচের হিসেব পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বহু পঞ্চায়েতই প্রাপ্ত অনুদানের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। এটাও খরচ না হওয়ার অন্যতম কারণ। যেমন, অণ্ডালের দক্ষিণখণ্ড পঞ্চায়েত ও খাঁদরা পঞ্চায়েত যথাক্রমে প্রায় এক কোটি ১৭ লক্ষ টাকা ও প্রায় ৯৯ লক্ষ টাকা পেলেও একটি টাকাও খরচ করতে পারেনি। বহু পঞ্চায়েতের তহবিলেই এ পর্যন্ত ৯০ লক্ষ থেকে দু’কোটি টাকা পর্যন্ত পড়ে রয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘উন্নয়মূলক বিভিন্ন কাজের দরপত্র ডেকে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আধিকারিকদের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পড়ে থাকা টাকা আগামী তিন মাসের মধ্যে খরচ করতে হবে।’’