শনিবার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে বুদবুদ চক্রের স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) এবং শিক্ষকেরা। ইনসেটে, জেলা স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) শনি ও রবিবার অফিস খোলা রাখার নির্দেশ। নিজস্ব চিত্র
জেলার নির্দেশ মতো অফিসে এসেছিলেন স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক, বুদবুদ চক্র)। কিন্তু শনিবার এসে দেখলেন অফিসে তালা। যাঁর কাছে চাবি থাকে, সেই কর্মী জানালেন, তাঁর বাড়ি গিয়ে চাবি আনতে হবে!— পূর্ব বর্ধমান জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) শনি ও রবিবার অফিস খোলা রাখতে বললেও শনিবার এই দৃশ্যই দেখা গিয়েছে বুদবুদের ওই অফিসে। দেখা মেলেনি কর্মীদের, জানান স্কুল পরিদর্শকই।
গত ২৪ জানুয়ারি জেলা স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) দফতর থেকে জানানো হয়, প্রাথমিক শিক্ষকদের নতুন বেতনক্রম ‘রোপা ২০১৯’ কার্যকর করার জন্য এই দু’দিন জেলার সব স্কুল পরিদর্শকের অফিস খোলা রাখতে হবে।
বুদবুদ চক্র সূত্রে জানা যায়, নির্দেশ মতো এ দিন অফিসে এসেছিলেন এই চক্রের স্কুল পরিদর্শক জয়ন্ত বর্মন। সঙ্গে ছিলেন এক শিক্ষকও। এ ছাড়া, দিনভর প্রায় ১৫ জন শিক্ষক আসেন। বিকেল পর্যন্ত অফিস খোলার অপেক্ষা করেন জয়ন্তবাবু। কিন্তু কর্মীরা না থাকায় তালাবন্ধই ছিল তাঁর দফতর। শেষমেশ ফিরে যান তিনি। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘যাঁর কাছে চাবি থাকে, তাঁকে ফোন করলে তিনি জানান, বাড়ি গিয়ে চাবি আনতে হবে।’’ এই পরিস্থিতিতে কাজ না হওয়ায় দীর্ঘ অপেক্ষার পরে, ফিরে যান শিক্ষকেরাও।
কিন্তু কেন আসেননি কর্মীরা? বিভিন্ন চক্রের স্কুল পরিদর্শকদের অফিস সূত্রে জানা যায়, কর্মীরা ‘সর্বশিক্ষা মিশনের’ আওতাধীন। বুদবুদ চক্রে রয়েছেন ১১ জন কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মীদের কয়েকজন জানান, তাঁরা শুক্রবারই অফিস ছাড়ার আগে জানিয়েছিলেন, মিশনের নির্দেশ না পেলে তাঁরা আসবেন না। বিষয়টি নিয়ে জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘ওই কর্মীদের বলি, আমরা সবাই শিক্ষা দফতরের কাজ করছি। এ ভাবে ভাগাভাগি করা যায় না। কিন্তু তাঁরা কিছুই শুনতে চাননি।’’
এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) নারায়ণচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘চাবি এ ভাবে আটকে রাখা যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে বলেছি। এ ভাবে অনড় না থেকে নিজেদের মধ্যে বোঝাপাড়া করে কাজ করা উচিত।’’ পাশাপাশি, অনুপস্থিত কর্মীদের কারণ দর্শানোর জন্য সোমবার নোটিসও ধরানো হবে বলে বুদবুদ চক্রের স্কুল পরিদর্শক জানিয়েছেন।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে সর্বশিক্ষা মিশন এবং জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ছিল কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক মৌলি সান্যাল বলেন, ‘‘স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকে নির্দেশিকার বিষয়ে আগে জানানো হলে আমরাও উদ্যোগী হতে পারতাম। আমাদের বিষয়টি জানা ছিল না। সরকারি কাজ থাকলে ছুটির দিনেও দরকার হলে কাজ করতে হবে। খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ যদিও নারায়ণচন্দ্রবাবুর দাবি, ‘‘এটা আমাদের দফতরের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকেও চিঠি দিয়েছিলাম।’’
পাশাপাশি, কালনা পূর্ব চক্রের স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) অফিসটিও বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে ওই চক্রের স্কুল পরিদর্শক অভিজিৎ জানা বলেন, ‘‘যে উদ্দেশ্যে এ দিন অফিস খোলার কথা ছিল, সেই কাজ হয়েছে। অফিস বন্ধ ছিল না।’’