কাটোয়ায় পলিথিন ঢাকা প্রতিমা, কাজ বন্ধ বর্ধমানের একটি মণ্ডপে। নিজস্ব চিত্র
মহালয়ার আগে মুখ ভার আকাশের। আকাশের কালো ছোপ পুজো উদ্যোক্তাদের মুখেও।
বেশির ভাগ জায়গাতেই প্যান্ডেলের কাজ চলছে জোরকদমে। প্রতিমা শিল্পীদের কাজও শেষের দিকে। কিন্তু সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সব কাজেই ‘থমকে’ গিয়েছে। উদ্যোক্তাদের অনেকে মণ্ডপের বাইরের কাজ বন্ধ রেখে ভেতরে খুঁটিনাটি কাজ করছেন। রঙের কাজ বন্ধ করে প্লাস্টিকে প্রতিমা মুড়ে রাখছেন মৃৎশিল্পীরা।
কালনা শহর, পাটুলি, জাহান্নগরে রয়েছে অজস্র প্রতিমা শিল্পীদের কারখানা। দুর্গাপুজোর সময় হাজার দশেক শিল্পী তৈরি করেন এখানকার শিল্পীরা। তাঁদের দাবি, শুরুতে ভাল আবহাওয়ায় প্রতিমা তৈরির কাজ এগোচ্ছিল ভালই। কিন্তু মূর্তি শুকনোর সময়েই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। পূর্বস্থলীর ভাণ্ডারটিকুরি এলাকার মৃৎশিল্পী খোকন পাল, গৌতম পাল, সুমন পালেরা জানান, এখন প্রতিমা রঙের কাজ চলছে। টানা দু’দিন ধরে রোদ না ওঠায় কাজ বন্ধ করে পলিথিনে ঢেকে রাখতে হচ্ছে প্রতিমা। এমন আবহাওয়া আরও কয়েকদিন চললে প্রতিমা সময়ে সরবরাহ করা কঠিন হয়ে যাবে, দাবি তাঁদের। শিল্পীদের দাবি, অনেকেই কারখানায় আগুনের তাপে প্রতিমা শুকনোর চেষ্টা করছেন। তবে তাতেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
কাটোয়ার কুমোরপাড়াতেও দিন-রাত কাজ করছেন শিল্পীরা। তাঁদের দাবি, পলিথিনে মুড়ে রাখলেও বেশ কিছু প্রতিমার অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই কাঁচা অবস্থাতেই অনেকে রেখে দিয়েছেন প্রতিমা। তবে এর পরেও বৃষ্টি চললে ওই প্রতিমা শুকিয়ে, রং করে সময়ে পৌঁছে দেওয়া মুশকিলের হয়ে যাবে, দাবি তাঁদের। এক মৃৎশিল্পী তিনকড়ি পালের দাবি, ‘‘বৃষ্টি হলেও পুজো উদ্যোক্তারা সমস্যা বুঝতে চাইছেন না। দিনে দু’বার এসে চতুর্থীতে প্রতিমা দেওয়ার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। বৃষ্টি না কমলে আমাদের হাত-পা বাঁধা।’’
বিপাকে পড়েছেন বর্ধমান শহরের একাধিক বড় পুজোর কর্মকর্তারা। উদয়পল্লি সুভাষ সঙ্ঘ সর্বজনীন পুজো কমিটির কর্মকর্তা উল্লাস করগুপ্ত জানান, থিমের সঙ্গে মানানসই করে মণ্ডপের বাইরে প্রজাপতি আঁকার কাজ চলছিল। ১২ জন কাজ করছিলেন। সোমবার বিকেলের পর থেকে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন তাঁরা। কাঞ্চননগর বেলপুকুর কিশোর সঙ্ঘের সদস্যদেরও দাবি, ১০ জন কর্মী মণ্ডপের বাইরে পটচিত্র আঁকছেন। সেই কাজ আপাতত বন্ধ। এর জন্য বাড়তি ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, দাবি তাঁদের। আলোকসজ্জা এবং মণ্ডপের বাইরের কারুকাজ চলছে আলমগঞ্জ বারোয়ারিতেও। সেখানকার কর্মকর্তা মনীশ সিংহেরও দাবি, বৃষ্টি আরও কিছুদিন চললে মণ্ডপসজ্জায় কাটছাঁট করতে হবে। চিন্তায় ঘুম উড়েছে বড়নীলপুর ফ্রেন্ডস ক্লাবের কর্তেদেরও। সৌম্যজিৎ সেন বলেন, ‘‘আপাতত ভেতরে কাজ চলছে। কিন্তু সে আর ক’দিন!’’
‘বৃষ্টি-অসুরে’র হাত থেকে রেহাই চাইছেন সকলেই।