শনিবারের দুর্ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র
রাত বাড়লেই শুরু হয়ে যায় দৌরাত্ম্য। শহরের সরু রাস্তায় দ্রুত গতিতে মোটরবাইক ছুটিয়ে যাতায়াত করে কিছু যুবক। শুক্রবার রাতে তেমনই একটি মোটরবাইকের ধাক্কায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল কালনা শহরে। শহরের অনেকের দাবি, মত্ত অবস্থায় এ ভাবে বাইকনিয়ে দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বার বারদুর্ঘটনা ঘটলেও পুলিশ-প্রশাসনব্যবস্থা নেয় না।
শুক্রবার রাতে কালনার জগন্নাথতলায় মোটরবাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় (৬০) নামে ওই বৃদ্ধের। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, এলাকায় একটি রাস্তার বাঁকের কাছে রাত ১০টা নাগাদ সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তীব্র গতিতে আসা একটি মোটরবাইক আচমকা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে একটি দোকানে ঢুকে পড়ে। বাইকের আঘাতে কিছুটা দূরে ছিটকে পড়েন বৃদ্ধ। কালনা মহকুমা হাসপাতালে রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড়ের মধ্যে পালিয়ে যায় ওই দুই বাইক আরোহী যুবক।
শহরের অনেকের অভিযোগ, রাত ১০টার পর থেকে তেঁতুলতলা, ১০৮ শিবমন্দির, সোনাপট্টি, খেয়াঘাটের রাস্তা, জগন্নাথতলা, পুরনো বাসস্ট্যান্ড-সহ বিভিন্ন জায়গায় মোটরবাইকের এমন দাপট দেখা যায়। তীব্র আওয়াজ তুলে কিছু যুবক বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করেন। অনেক মোটরবাইকেই একাধিক আরোহী থাকেন। এমনিতেই শহরের রাস্তাগুলি সরু। তার উপরে রয়েছে অজস্র বাঁক। ফলে, বিপদের সম্ভাবনা যথেষ্ট। বার বার দুর্ঘটনা ঘটছেও। তেমন ঘটনার ক্ষেত্রে দু’চার দিন পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়। তার পরে আবার দৌরাত্ম্য শুরু হয়।
বছর দেড়েক আগে কালনার মহিষমর্দিনীতলার ঘাটের সামনেরাতে দুই যুবক বাইক নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। মৃত্যু হয় এক জনের। শহর লাগোয়া এসটিকেকে রোডেও এমন দাপাদাপি দেখা যায় বলে অভিযোগ। গত ১০ মে কিসানমান্ডির কাছে দু’টি বাইকের মুখোমুখি ধাক্কায় বছর আঠারোর দুই তরুণের মৃত্যু হয়। বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, গতিরঝড় তোলার সঙ্গে অনেক বাইক আরোহী ফোনে ভিডিয়ো তুলতে ব্যস্ত থাকেন। মোটরবাইক নিয়ে এমন অনেক যুবক কালনা থেকে হুগলির বেহুলায় যান, আবার দ্রুত গতিতে সেখান থেকে ফেরেন।
জগন্নাথতলায় মৃত ব্যক্তির আত্মীয় রাজা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাইকটি এত জোরে ধাক্কা মারে যে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ওঁকে বাঁচানো যায়নি।’’ এলাকার অনেকের অভিযোগ, রাস্তাটিতে বিপজ্জনকবাঁক থাকলেও গাড়ির গতি কমানোর বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। স্থানীয় কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাতে শহরে যে ভাবে দ্রুত গতিতে মোটরবাইক ছোটে, আমারও ভয় হয়। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।’’ কালনার উপপুরপ্রধান তপন পোড়েলওজানান, বিষয়টি নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন। পুরসভার তরফে তা পুলিশকেজানানো হবে।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। থানায় খোলা হয়েছে সিসিটিভি-র কন্ট্রোল রুম। কেন ফুটেজ দেখে এমন বাইক আরোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? পুলিশের একাংশের দাবি, ধরপাকড় যে একেবারে হয় না, তা নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই যুবকদের ধরার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী নানা মহল থেকে ফোন আসে। এসডিপিও (কালনা) সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য শুধু বলেন, ‘‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’