অভিযোগ এখানেই। নিজস্ব চিত্র।
কারখানার সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ নেই। তার পরে, কারখানার জল-বিদ্যুৎ ‘চুরি’ করে বার্নপুরের ইস্কো কর্মী আবাসন দখল করে বসবাস, কারখানার জমিতে অবৈধ নির্মাণ তুলে ব্যবসা চালানো, কিছু ক্ষেত্রে অসামাজিক কাজকর্ম চালাচ্ছেন এক দল লোক। এমনই অভিযোগ ইস্কোর কর্মীদের একাংশের এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের।
আবাসনগুলিকে কেন্দ্র করে অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ২০১৩-য় ভারতী ভবন লাগোয়া পরিত্যক্ত আবাসনে এক নাবালিকার উপরে অত্যাচার চালানো, খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে তেতে ওঠে এলাকা। ওই ঘটনার পরে, ইস্কো-র তরফে অভিযান চালানো হলেও কিছু দিন পরে ফের তা শিথিল হয়ে যায় বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইস্কো-কর্মী বলেন, ‘‘সন্ধ্যা নামলেই শহরে বহিরাগতেরা ঢুকে ফাঁকা আবাসনগুলিতে মদ-জুয়ার আসর বসাচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছি না।’’ আইএনটিইউসি-র নেতা হরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘কর্মী আবাসনের দখলদারি রুখতে পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছি ইস্কো-র কাছে।’’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনও এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন।
ইস্কো সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটোদিঘারি, নিউটাউন রাঙাপাড়া, বার্নপুর শহরের কে টাইপ, কেএস টাইপ, সুইপার কলোনি, বার্নপুর সিনেমা হল লাগোয়া এলাকার কে টাইপ, এবি টাইপ, সেভেন বিকিউ টাইপ, এসএসপি ময়দান লাগোয়া অঞ্চলের প্রায় ৪৫০টি আবাসন ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলি ভেঙে ফেলারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। জল-বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, বেশির ভাগ আবাসনেরই দখল নিয়েছেন বহিরাগতেরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি থেকে অবৈধ সংযোগও নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
কিন্তু কী ভাবে আবাসনগুলিতে চলছে বসবাস? বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশের খাতায় ‘দুষ্কৃতী’ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় কয়েকজনের মদতে চলা ‘চক্র’ ভাড়ার বিনিময়ে ওই আবাসনগুলিতে থাকতে দিচ্ছে বহিরাগতদের। যেগুলির বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেগুলির জন্য মাসে ৫০০ টাকা, যে আবাসনগুলির হাল সামান্য খারাপ, সেগুলির জন্য মাসে ১,৫০০ টাকা এবং যে আবাসনগুলি হাল তুলনায় ভাল, সেগুলির জন্য ২,২০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে ওই ‘চক্র’। এই চক্র ভাঙতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটছে। যেমন, ইস্কোর আধিকারিকেরা জানান, গত ১৩ অগস্ট সংস্থার কর্মীরা গুরুদ্বার লাগোয়া কয়েকটি আবাসনের দখল মুক্ত করতে গেলে, তাঁদের স্থানীয় কয়েকজন হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। একই ছবি দেখা যায়, গত ৪ অগস্ট, সিনেমাহল লাগোয়া এলাকাতেও।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ কর্মীরা আবাসন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ সিটু নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর। ইস্কোর কর্তাদের সূত্রেও জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে প্রায় একশোটি আবাসন কর্মীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলি দখল করে বসে আছেন একদল বহিরাগত।
পাশাপাশি, শহরে, কারখানার ফাঁকা জমি দখল করে অবৈধ নির্মাণও হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়। ইস্কো সূত্রেও জানা গিয়েছে, বার্নপুর ইস্পাত শহরের টাউন পুজো এলাকায় এই কারবারের রমরমা।
যদিও ইস্কো-র শহর বিভাগের জিএম ভাস্কর কুমার বলেন, ‘‘আবাসনের ও কারখানার জমি দখলমুক্ত করতে সিআইএসএফ কর্মী, আধিকারিকদের নিয়ে বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। অতিমারির কারণে কাজ হচ্ছে না। তবে দ্রুত অভিযান শুরু হবে।’’ তবে এই টাস্ক ফোর্স কাজ করতে গেলে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই পরিস্থিতির সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইস্কো কর্তৃপক্ষ।