বারাবনির একটি করাতকলে চলছে অভিযান। নিজস্ব চিত্র
বৈধ নথিপত্রের অভাব এবং মজুত কাঠের উপযুক্ত প্রমাণপত্র না থাকার অভিযোগে পশ্চিম বর্ধমানের ১৬টি করাতকল বন্ধ করে দিল প্রশাসন। বুধবার বারাবনিতে ১১টি এবং দুর্গাপুরে পাঁচটি করাতকল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান দুর্গাপুরের বনাধিকারিক মিলন মণ্ডল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অবৈধ কাঠ কারবারিদের দৌরাত্ম্য রুখতে এ দিন অভিযান চালানো হয়। বিভিন্ন কাঠগোলার মালিককে ডেকে উপযুক্ত কাগজপত্র জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি গাছ কাটার প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ে জেলা প্রশাসন ও বন দফতরের কাছে। বন দফতরের আধিকারিকেরা জানান, তদন্তে নেমে সে সবের সত্যতাও মিলেছে। ক্রমাগত গাছ কাটার অভিযোগ ওঠায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি পৃথক একটি তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন। প্রশাসনের কর্তারা জানান, দুষ্কৃতীরা গাছগুলি কাটার পরে কী করে, সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তদন্তে নেমে জানা যায়, বিভিন্ন করাতকলে সে সব গাছের গুঁড়ি বিক্রি করা হয়। জেলাশাসকের দফতরে এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠান বন দফতরের আধিকারিকেরা। তার ভিত্তিতে জেলাশাসক শিল্পাঞ্চলের সমস্ত করাতকলে অভিযানের নির্দেশ দেন।
বারাবনির পানুড়িয়া ও দোমহানি এলাকার বিভিন্ন করাতকলে বুধবার অভিযান চালায় প্রশাসন ও বন দফতরের দল। ছিলেন বারাবনির বিডিও সুরজিৎ ঘোষ এবং বন দফতরের আসানসোল রেঞ্জের আধিকারিক অরূপ রায়। সুরজিৎবাবু বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশ পেয়ে অভিযান শুরু করেছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বেশ কিছু করাতকল আমরা সিল করে দিয়েছি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সব গোলায় যে কাঠ মজুত রয়েছে, তার নথিপত্রে গরমিল ধরা পড়েছে। ব্যবসা বিষয়ক কাগজপত্রেও কিছু ত্রুটি রয়েছে। দুর্গাপুর শহর লাগোয়া নানা জায়গাতেও পাঁচটি করাতকল বন্ধ করা হয়েছে এ দিন।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, বারাবনির বিস্তীর্ণ এলাকায় জঙ্গল অসংরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। কাঠের চোরা কারবারিরা সেখান থেকে গাছ কেটে রাতারাতি লাগোয়া করাতকলে পাঠিয়ে গাছের গুঁড়ি চোরাই করায়। তার পরে কাঠের পাটা অজয়ের রুনাকুড়া ঘাট পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে পাচার করে দেওয়া হয়। এই অবৈধ কারবারের রমরমা রুখতেই অভিযান শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সালানপুর ব্লকেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। দেন্দুয়া পঞ্চায়েত এলাকায় মাইথন লাগোয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চোরাই কাঠের কারবারিরা সক্রিয় বলে জানা গিয়েছে। সেখানে শীঘ্রই অভিযান হবে বলে জানান আধিকারিকেরা। দুর্গাপুরের বনাধিকারিক মিলনবাবু জানান, বেআইনি করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।