মলয় ঘটক।
দল ও বিভিন্ন শাখা সংগঠনে ব্লক স্তরের পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল। তাতে দেখা যাচ্ছে, দলের পশ্চিম বর্ধমানের ১৮টি সাংগঠনিক ব্লকের মধ্যে আটটিতে রদবদল করা হয়েছে। জেলার রাজনীতির সঙ্গে ওয়াকিবহাল অংশের একাংশের মতে, নতুন আট জনের মধ্যে সাত জনই দলের অন্দরে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি, আরও দু’টি ব্লকের সভাপতিরাও মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। এই সূত্রে, জেলায় দলে মলয়ের প্রভাব আরও বাড়ল কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। যদিও, জল্পনা উড়িয়ে দিচ্ছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
পদাধিকারীদের তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, জামুড়িয়া ১ ও ২, আসানসোল উত্তর ২, আসানসোল দক্ষিণ, কুলটি, পাণ্ডবেশ্বর, কাঁকসা ও দুর্গাপুর ৩, এই আটটি সাংগঠনিক ব্লকে নতুন সভাপতিদের আনা হয়েছে। দলের একটি সূত্রের মতে, এর মধ্যে আসানসোল দক্ষিণ বাদে সব ক’টিতেই মলয়-ঘনিষ্ঠরাই জায়গা পেয়েছেন। সে সঙ্গে, অন্ডাল এবং আসানসোল উত্তর ১-এর ব্লক সভাপতিরাও তৃণমূলের অন্দরে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। ঘটনাচক্রে, গত বার জামুড়িয়া ২, আসানসোল উত্তর ১ ও ২, কুলটি, পাণ্ডবেশ্বর, অন্ডালে মলয়-ঘনিষ্ঠ ব্লক সভাপতিরা ছিলেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি।
এই রদবদলের মধ্যে দু’টি তাৎপর্যপূর্ণ বদলের কথা বলছেন অনেকেই। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দলের দুই পুরনো নেতা, আসানসোল দক্ষিণের (আগে হিরাপুর) সভাপতি লক্ষ্মণ ঠাকুর এবং কুলটির বিমান আচার্যকে। কিন্তু কেন? তৃণমূলের একটি অংশের অনুমান, বিধানসভা ভোটে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতার জন্য লক্ষ্মণকে এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদের জন্য বিমানকে পদ হারাতে হল। যদিও লক্ষ্মণ বলছেন, “দলের জন্মলগ্ন থেকে রয়েছি। ফলে, আগামী দিনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই দলের কাজ করব। পদটা কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।” একই কথা বলছেন বিমানও। ঘটনাচক্রে, আসানসোল দক্ষিণ ও কুলটিতে যাঁরা নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁরা যথাক্রমে দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন এবং মলয় ও উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তৃণমূলেরঅন্দরে পরিচিত।
পাশাপাশি, একটি সূত্রের দাবি, জামুড়িয়ার দু’টি ব্লকে সভাপতি না বদলানোর জন্য দলের কাছে দরবার করেছিলেন এক বিধায়ক। যদিও বাস্তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি। দু’টি জায়গাতেই এসেছেন দলের অন্দরে মলয়-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতরাই। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননিসংশ্লিষ্ট বিধায়ক।
ঘনিষ্ঠতার সূত্রে পদ-প্রাপ্তির তত্ত্বে আমল দেননি নেতৃত্ব। নতুন যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই বক্তব্য: “আমরা দল করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে। মলয় ঘটক আমাদের নেতা। দলে দক্ষতা ও কাজের ভিত্তিতেই দায়িত্ব দেওয়া হয়।” একই কথা বলছেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনও। তাঁর কথায়, “কে কার ঘনিষ্ঠ, পদপ্রাপ্তির জন্য সেটা একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বাভাবিক নিয়মেই দলের সাংগঠনিক স্তরে অনেক সময় রদবদল হয়।” তবে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য চেষ্টা করে মলয়ের সঙ্গে যোগাযোগকরা যায়নি।