শ্রুতি। —নিজস্ব চিত্র।
গবেষণা কেন্দ্রের চত্বরেই তৈরি করা হয়েছে ‘বাঙ্কার’। মাথার উপর দিয়ে লঞ্চার যেতেই সেই বাঙ্কারের ভিতরে আশ্রয় নিতে হয় ইজ়রায়েলে রসায়ন নিয়ে গবেষণা করতে যাওয়া বর্ধমানের শ্রুতি মণ্ডলকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের বিএল হাটি রোডের বাড়িতে বসে শ্রুতির বাবা নীলকমল মণ্ডল বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে এমনিতেই দু’চোখ এক হচ্ছে না। রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। ঘটনাটা শোনার পর থেকে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’’ তবে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কেন্দ্র সরকার উদ্যোগী হওয়ায় আশা দেখছেন তাঁরা।
গত কয়েক দিন ধরে ইজ়রায়েল আর হামাসের তীব্র সংঘাত চলছে। প্রতিনিয়ত যুদ্ধবিমান পাক খাচ্ছে ইজ়রায়েলের আকাশে। বোমাগুলিতে অন্তত আড়াই হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। শ্রুতির পরিজনদের দাবি, “আমাদের বাড়ির মেয়েও গবেষণা করতে গিয়ে আটকে পড়েছে। ওই সব খবর দেখার পরে কী আর মন শান্ত থাকে। ভয় আঁকড়ে ধরেছে।’’ শ্রুতির মা চন্দনাদেবী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছেন বড় মেয়ে, শিক্ষিকা শ্রেয়া। নীলকমল বলেন, “কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পরে স্ত্রী রে এসেছে। বড় মেয়েও বার বার ছুটে আসছে।’’
বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক হন শ্রুতি। স্নাতকোত্তর করেন ওড়িশায়। তারপরে গবেষণা করতে ২০২২ সালে ইজ়রায়েলের হাইফা শহরের ‘টেকনিয়ন ইজ়রায়েল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’তে যান। এখন সেখান থেকেই পোস্ট-ডক্টরেট করছেন। মাঝে বিয়ের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছিলেন। বিয়ে মিটিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি আবার ইজ়রায়েলে চলে যান। তাঁর স্বামী সব্যসাচী সরকার রয়েছেন আমেরিকায়। শ্রুতির বাবা বলেন, “বাঙ্কার থেকে ছাড়া পেয়ে বৃহস্পতিবারই গবেষণা কেন্দ্রে ঢুকেছে শ্রুতি। এই ঘটনার আগে দিনে বেশ কয়েক বার কথা হত, ভিডিয়ো কল করতাম। এখন আর সেই সুযোগ পাচ্ছি না।’’ চিন্তা করবেন বলে মেয়ে ওখানকার বর্তমান অবস্থাও পুরোপুরি জানাচ্ছেন না, দাবি তাঁর। শ্রুতির পরিজনরা বলেন, “সরকার উদ্যোগী হয়েছে, এটা খুবই ভাল কথা। তবে যতক্ষণ না মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি, ততক্ষণ তো উদ্বেগ থাকবেই।“