—নিজস্ব চিত্র।
পরনে শুধুমাত্র ডায়াপার। বাঁ-হাতে লাগানো স্যালাইনের নল। সে অবস্থাতেই একটি কাঠের টুল নিয়ে কাটোয়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভাঙচুর চালালেন এক মধ্যবয়সি রোগী। তাঁর তাণ্ডবের জেরে নষ্ট হল কয়েক লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতি। অল্পবিস্তর জখম দু’জন নার্স। ঘণ্টাখানেকের ধ্বংসলীলার পর ওই রোগীকে শান্ত করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকর্মীরা। চিকিৎসার জন্য রবিবার তাঁকে কলকাতার একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কাটোয়া শহরের গৌরাঙ্গপাড়ার বাসিন্দা অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শনিবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শনিবার রাত ৮টা নাগাদ হাসপাতালের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)-এ রাখা হয় ৫৪ বছরের ওই রোগীকে। রাত ১টা নাগাদ আচমকাই নিজের শয্যা ছেড়ে উঠে পড়েন অরুণ। এর পর একটি কাঠের টুল নিয়ে ভাঙচুর চালাতে থাকেন। ভেঙে ফেলেন ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেওয়ার যন্ত্র। ভাঙচুরের শব্দে ছুটে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কোনও রকমে তাঁর কাছ থেকে টুলটি কেড়ে নেওয়া হলে খালি হাতেই কম্পিউটারের সিপিইউ, মনিটর-সহ অনান্য মেশিনপত্র আছড়ে ফেলতে শুরু করেন। ফেলে দেন অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার, ওষুধের প্যাকেটও। এক নিরাপত্তারক্ষী ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করলে তাঁর দিকেও তেড়ে যান অরুণ। আতঙ্কিত ইউনিটের কর্মীরা পাশের ঘরে দরজা বন্ধ করে আশ্রয় নেন। অভিযোগ, কর্তব্যরত রক্ষীরা ওই রোগীকে আটকানোর চেষ্টা করেননি। তাঁর তাণ্ডবে দু’জন নার্স সামান্য জখমও হয়েছেন।
খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে পৌঁছয় কাটোয়া থানার পুলিশ। শেষমেশ ঘণ্টাখানেকের তাণ্ডবের পর অরুণকে ধরে ফেলে ঘুমের ওষুধ দিয়ে শান্ত করা হয়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘‘রক্ত পরীক্ষায় অরুণের সোডিয়াম-পটাসিয়ামের তারতম্য ধরা পড়েছে।’’ শারীরিক সমস্যার জন্যই তিনি এমন কাণ্ড করেছেন বলে অনুমান পুলিশের।
এই ঘটনায় এখনও আতঙ্কিত হাসপাতালের কর্মীরা। এক নার্স বলেন, ‘‘শনিবার রাতের অভিজ্ঞতা জীবনেও ভুলব না। প্রতিটি মুহূর্ত চরম উৎকণ্ঠায় কেটেছে। ওই রোগী দামি দামি যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করলেও অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছিল।’’
হাসপাতালের সুপার ধীরাজ রায় বলেন, ‘‘আমার চাকরি জীবনে এমন ঘটনা এই প্রথম। এইচডিইউ বিভাগের কয়েক লক্ষ টাকার চিকিৎসা-সামগ্রী ভাঙচুর করেছেন ওই রোগী। এ নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।’’ আচমকা কেন এমন আচরণ করলেন অরুণ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।