মদন মিত্র এবং মুকুল রায়। ফাইল চিত্র।
সব সময় আনন্দে থাকা মদন মিত্র কেমন করে সামাল দেন ব্যক্তিগত সঙ্কট? এমনই ছিল প্রশ্ন। আর তাতেই ন’বছর আগের পিয়ালি মুখোপাধ্যায় মৃত্যু প্রসঙ্গে তাঁর জড়িয়ে পড়ার ঘটনা টেনে আনলেন মদন মিত্র। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভে বললেন, “অন্য কেউ হলে বলত এ সব কথা বলিস না। চেপে রাখ। কিন্তু কেন? আমার জীবন তো খোলা পাতা।’’ সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। আমি শুনলাম আমিই তাঁকে খুন করেছি। মেয়েটির বাড়ি রাজারহাটে। আর আমার দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে সংবাদমাধ্যমে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে।”
এই ঘটনা ২০১৩ সালের। মদন তখন রাজ্যের মন্ত্রী। ২৬ মার্চ রাজারহাটের একটি ফ্ল্যাট থেকে ২৮ বছরের পিয়ালির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এই মৃত্যু নিয়ে বিস্তর হইচই হলেও বিধাননগর পুলিশ এটিকে নিছক আত্মহত্যার ঘটনা বলেই তদন্ত শেষ করে দেয়। যদিও পিয়ালির ফ্ল্যাট থেকে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। জল্পনা ছিল, মদনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন পিয়ালি। পরে ২০১৫ সিবিআইয়ের আতসকাচের তলায় নতুন করে আসে ওই মৃত্যুর বিষয়। সেটা সারদা-কাণ্ডের তদন্তের সময়। কারণ, পিয়ালি সারদার আইনি পরামর্শদাতা ছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি ছিল, পিয়ালি যে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সে সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, পিয়ালি যে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সে সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার মদনের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে এই তথ্যের কিছু অংশ কলকাতা হাইকোর্টে পেশও করেছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। যদিও পরবর্তী কালে ওই ঘটনার সঙ্গে মদনের নাম আর ওঠেনি। ওই প্রসঙ্গে মদন জানান, তাঁর নামে খুনের অভিযোগ উঠলেও পিয়ালির বাড়ির লোকেরা স্বামী, মা, বাবা-সহ পরিবারের সকলেই বলেন তাঁদের এমন কোনও অভিযোগ নেই।
লাইভের মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডে মদন যে মন্তব্য করেছিলেন তা নিয়ে কি পরে কখনও মনে হয়েছে যে তিনি ভুল করেছিলেন? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে মদন টেনে আনেন মুকুল রায় প্রসঙ্গ। সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে গিয়ে তৃণমূলে ফেরা মুকুল বলে ফেলেন, উপনির্বাচন হলে বিজেপি-ই জিতবে। পরে জানা যায়, শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা হেরফের করাতেই সেই সময় অসংলগ্ন কথা বলেছিলেন মুকুল। ২০১২ সালের পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মদন টেনে আনেন মুকুলের সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পার্ক স্ট্রিটে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন সুজেট জর্ডন নামে এক মহিলা। তা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। সেই রাতে পার্ক স্ট্রিটের এক পানশালায় সুজেটের সঙ্গে আলাপ জমিয়েছিল কাদের নামে এক যুবক ও তার বন্ধুরা। ফেরার সময় বিশ্বাস করে তাদের গাড়িতে উঠেছিলেন সুজেট। অভিযোগ চলন্ত গাড়িতেই তাঁকে ধর্ষণ করে কাদের। বাকিরা মদত জোগায়। রবীন্দ্র সদনের কাছে সুজেটকে গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। সেই সময় মন্ত্রী মদনের একটি মন্তব্য বিতর্কের আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিয়েছিল। বলেছিলেন, “ওই মহিলা এসকর্ট সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত৷” ২০১৫ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় সুজেটের। কিন্তু এখনও সেই বিতর্কের রেশ রয়ে গিয়েছে।
কখনও মনে হয়েছে ওই মন্তব্য করাটা ভুল হয়েছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে মদন শনিবার বলেন, “ক’দিন আগেই শুনলাম, আমার প্রাণের বন্ধু মুকুল রায় কিছু বলে ফেলেছেন। তার পরে শুনলাম ওঁর সোডিয়াম, পটাশিয়ামের সমস্যা হয়েছে। আমারও তো সেই সময় ম্যাগনেশিয়াম কম থেকে থাকতে পারে। আমার সেই সময় কোনটা কম ছিল তা নিয়ে পরীক্ষা হয়নি।” তবে ভুল করা নিয়ে তাঁর মনে যে অপরাধ বোধ কাজ করে সেটাও যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন মদন। বলে, “কোথাও যদি ভুল করে থাকি, মানুষ যেন আমায় ক্ষমা না করেন। মানুষ যেন সব সময় চোখে আঙুল দিয়ে আমায় দেখিয়ে দেন কোনটা তোমার ভুল। যাতে ভবিষ্যতে সেই ভুল আর না করি। আর ভুল করার পরেও যদি আমার অহঙ্কার থাকে তবে মানুষ যেন আমায় কোনও দিন ক্ষমা না করে।”