—প্রতীকী চিত্র।
জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্বোধন। হাজির তৃণমূলের সাংসদ। স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রীও। সোমবার মঞ্চেই সাংসদ কালীপদ সরেন প্রশ্ন তুললেন, অনুষ্ঠানে কুড়মি সমাজের গুণিজনেরা কেন নেই। মঞ্চ থেকেই জবাব মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজন করতে হয়েছে। তাই সকলকে সুযোগ দেওয়া যায়নি।
নেহাত ঘটনাচক্র। এ দিনই দলের জেলা কার্যালয়ে এসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ঝাড়গ্রাম ব্লকের সাপধরা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়মি জোটের দুই সদস্য। এতে কুড়মি বোর্ডে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১০ আসন বিশিষ্ট ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হল সাত। সকালে যোগদান অনুষ্ঠানে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিরবাহা। উপলক্ষ ভিন্ন। নিশানাও ভিন্ন। তবে ঘণ্টা তিনেকের ব্যবধানে মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই সাংসদকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘জঙ্গলমহল মর্মস্পর্শী। একটা-দুটো ভুল হলেও আগুন জ্বলতে পারে। সুতরাং সে দিকে আমরা যাব না। আমরা সমস্ত জঙ্গলমহলবাসীকে নিয়ে চলতে চাই।’’ সাংসদ অবশ্য এ মন্তব্য করেছেন ভিন্ন প্রেক্ষিতে। তিনি জানিয়েছেন, জঙ্গলমহল উৎসবে স্থানীয় অনেক শিল্পী সুযোগ পাননি। ফলে সাংসদের নিশানায় ছিলেন লোকরঞ্জন শাখার আধিকারিকেরা। কারণ, তাঁরাই ঠিক করেন উৎসবে কারা সুয়োগ পাবেন। এ দিন সাংসদ বলেন, ‘‘লোকরঞ্জন শাখার যে সব আধিকারিকেরা তালিকা তৈরি করেন, তাঁদের আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত। সুযোগ না পেয়ে শিল্পীরা আমাদের কাছে আবেদন-নিবেদন করছেন।’’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিরবাহা ছিলেন শেষ বক্তা। ফের জঙ্গলমহল উৎসব হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘খুব কম সময়ে আয়োজন করা হয়েছে। সকল শিল্পীকে সময় দেওয়া হয়নি। সীমিত সংখ্যক সুযোগ পেয়েছেন।’’ সাংসদ ছাড়াও আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের নেতা ঢেঙা হাঁসদা সরব হয়েছে মঞ্চে। ঢেঙা বলেন, ‘‘শুধু খেলা-মেলা করলে চলবে না। শিক্ষা না হলে কোনও সমাজের উন্নতি হয় না।’’ নেশার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এবং বাইক চালানো নিয়েও সচেতন করেছেন তিনি।
এ দিন সাংসদ বলেছেন, ‘‘মাহাতো সম্প্রদায়ের গুণিজনদের ডাকলে খারাপ হত না। যাঁরা অনুষ্ঠানের তালিকা করছেন, একটু ভেবেচিন্তে দেখবেন। যাতে আর না আগুন জ্বলে ওঠে।’’ অর্থাৎ সাংসদের অভিযোগ মূলত দু’টি। প্রথমত, স্থানীয় শিল্পীরা সুযোগ পাচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত, উদ্বোধন মঞ্চে কুড়মি সম্প্রদায়ের বিশিষ্টদের প্রতিনিধিত্ব নেই। দু’টি ক্ষেত্রেই তাঁর নিশানায় লোকরঞ্জন শাখার আধিকারিকেরা। তবে মন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘তথ্য সংস্কৃতি দফতরের সীমিত সংখ্যক যে শিল্পীরা আছেন, তাঁরাই সুযোগ পেয়েছেন। সকলে আগামী দিনে সুযোগ পাবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন, চিন্তার কারণ নেই।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘কেন্দ্র কোনও প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না। তারপরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পাশে আছেন। তাও যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের সমালোচনা আমরা করি, তা হলে মনে রাখবেন আমরা ওঁর , নিজেদের সমালোচনা করব।’’
জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক সন্তু বিশ্বাসের মোবাইল ছিল বন্ধ। অনুষ্ঠানে আসেননি জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মু । পরে দুলাল বলেন, ‘‘আমরা বিধানসভা এলাকায় অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলাম। বিষয়টি না জেনে কিছু বলতে পারব না।’’ তবে দলের একাংশ বলছেন, সাংসদ রাজনীতিক নয়, সাহিত্যিক। আনকোরা লোক বলেই মঞ্চে এ সব বলে ফেলেছেন।