Ausgram

‘ফতোয়া’র জেরে যুবককে শিকলে বেঁধে রাখার নালিশ

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমাইপুর গ্রামের লাইকেনি আদিবাসীপাড়ার বছর সাঁইত্রিশের ওই  যুবক রেলের ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন।

Advertisement

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৫:৫৬
Share:

বাঁধা যুবক। নিজস্ব চিত্র।

এক আদিবাসী যুবককে মানসিক ভাবে অসুস্থ দাবি করে দিন পনেরো ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার অভিযোগ উঠেছে আউশগ্রামের বেরেন্ডা পঞ্চায়েতের সোমাইপুর গ্রামে। ওই যুবকের পরিবারের দাবি, পাড়ার মোড়লের ‘ফতোয়া’য় এই কাজ করেছেন তাঁরা। ওই যুবকের অবশ্য দাবি, ষড়যন্ত্র করে তাঁকে এ ভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত মোড়লের দাবি, তাঁরা পরিবারটিকে ওই যুবকের চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বলেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

Advertisement

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমাইপুর গ্রামের লাইকেনি আদিবাসীপাড়ার বছর সাঁইত্রিশের ওই যুবক রেলের ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেন। ছুটিতে বাড়ি ফিরে চাষ-আবাদের কাজও করেন। গত কয়েকমাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় তিনি বাড়িতেই রয়েছেন। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে তাঁর। তাঁর ভাইয়ের দাবি, দিন পনেরো আগে দাদা-বৌদির মধ্যে অশান্তি হয়। তাঁদের সমাজের নিয়ম মেনে বৌদি বিষয়টি মিটমাটের জন্য পাড়ার মোড়লকে জানান। সেখানে তাঁর দাদার সঙ্গে মোড়ল ও উপস্থিত কয়েকজনের ঝামেলা হয়। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, ‘‘এর পরেই মোড়ল জানিয়ে দেন, দাদার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাঁকে বাড়িতে আটকে রাখার নিদান দেওয়া হয়। বাইরে বেরোলে, মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে বলেও জানানো হয়।’’

পরিবারের দাবি, মোড়লের ‘চাপেই’ সেই সময় থেকে ওই যুবককে হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে। শুধু শৌচগারে যাওয়ার সময়ে শিকল খোলা হয়। তাঁর ভাইয়ের দাবি, ‘‘বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে জানানো হয়েছে। কিন্তু পাড়ার বিষয়ে তিনি কিছু করতে পারেননি।’’ শিকলে বাঁধা যুবকের দাবি, ‘‘চাষের কাজ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বচসা হয়েছিল। কাউকে মারধর করিনি। শুধু-শুধু আটকে রাখা হয়েছে। শিকলে হাত-পা কেটে ঘা হয়ে যাচ্ছে।’’

Advertisement

পাড়ার মোড়ল মঙলা হেমব্রমের যদিও দাবি, ‘‘ওই যুবক মানসিক ভাবে অসুস্থ মনে হওয়ায় চিকিৎসা করাতে বলেছিলাম। শিকল দিয়ে কেন বেঁধে রাখা হয়েছে, জানি না।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রূপা বাগদির বক্তব্য, ‘‘সমাজের চাপে পড়ে পরিবার ওই যুবককে বেঁধে রেখেছে বলে শুনেছি।’’

জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, ‘‘এ ভাবে কাউকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা ঠিক নয়। কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ওই ব্যক্তির চিকিৎসা করানো হবে।’’ বিডিও (আউশগ্রাম ১) অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement