এই গাড়িতেই বাড়ি ফিরছিল খুদে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
প্রতিদিনের মতোই স্কুল ছুটির পরে, পুলকারে বসে কেক, মিষ্টি খেতে খেতে বাড়ি ফিরছিল খুদেরা। কেউ নামবে কাটোয়ার বিষ্ণুপুর গ্রামে, কেউ নামবে মুস্থুলিতে। আচমকা একটি বালিবোঝাই ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে গাড়িটি। গুরুতর আহত হয়েছে চালক-সহ আট পড়ুয়া।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এসটিকেকে রোডে জগদানন্দপুর বাসস্টপের কাছে সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই ছিল যে গাড়ির সামনের অংশ পুরো দুমড়ে যায়। একটি সিট খুলে বাইরে চলে আসে। ছিটকে পড়ে পড়ুয়ারাও। বুধবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারাই জখমদের তুলে নিয়ে গিয়ে নিকটবর্তী নওয়াপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান। কেজি ওয়ান ও টু-এর দুই পড়ুয়া আদিত্য মণ্ডল ও সোনাক্ষী দাসের মাথায় গুরুতর চোট লেগেছে বলে জানা গিয়েছে। পরে চালক-সহ ওই দুই পড়ুয়াকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সোনাক্ষীর মা, বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা রমা দাস বলেন, ‘‘মেয়ে বাড়ি ফিরবে বলে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলাম। দেরি হওয়ায় চিন্তা হচ্ছিল। তখনই দুর্ঘটনার খবর পাই। হাসপাতালে এসে দেখি, মেয়ের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। কপাল জোরে মেয়েকে ফিরে পেয়েছি।’’ তাঁর দাবি, প্রশাসনের কাছে আবেদন পুলকারটি কী ভাবে দুর্ঘটনার মুখে পড়ল তা নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া শহরের সুবোধ স্মৃতি রোডে রয়েছে বেসরকারি প্রাক প্রাথমিক স্কুলটি। শহর ও আশপাশের গ্রামীণ এলাকা থেকে বহু শিশু পড়তে আসে এখানে। দু’টি ভাগে স্কুল চলে। এ দিন প্রাতর্বিভাগ ছুটি হওয়ার পরে, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মুস্থুলি গ্রামের দিকে যাচ্ছিল পুলকারটি। তখনই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্টিয়ারিং-এর নীচে, গাড়ির ভিতরে চাপচাপ রক্ত পড়ে রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পড়ুয়াদের টিফিন।
জগদানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা প্রত্যক্ষদর্শী প্রশান্ত বৈরাগ্যের কথায়, ‘‘তখন পৌনে ১১টা বাজে। রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়েছিলাম। সামনে দিয়েই পরপর বালিবোঝাই ট্রাক আর পুলকারটি গেল। তার পরেই বিকট আওয়াজ। পিছন ফিরে দেখি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মেরেছে পুলকারটি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কাছে গিয়ে দেখি, দুমড়ে যাওয়া গাড়ির ভিতরে রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছে পড়ুয়ারা। কোনও রকমে তাদের বার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই আমরা।’’ স্থানীয় লোকজনেরও দাবি, পুলকারের গতি নিয়ন্ত্রণে নজর দেওয়া উচিত প্রশাসনের।
যদিও হাসপাতালে ভর্তি ওই গাড়ির চালক, আমডাঙা গ্রামের বাসিন্দা অনুপ ঘোষের দাবি, ‘‘আমি ধীর গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। ট্রাকের থেকে নিরাপদ দূরত্বেই ছিলাম। আচমকা ট্রাকটি রাস্তার ডান দিকে চলে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধাক্কা লাগে। বরাত জোরে বেঁচেছি।’’
ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবদাস চৌধুরী জানান, তাঁদের নিজস্ব পুলকার নেই। অভিভাবকেরা নিজেরাই সুবিধামতো গাড়ি ঠিক করে পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠান। তবে গাড়ির অবস্থা দেখে নেওয়া হয়। তাঁর দাবি, ‘‘কী ভাবে দুর্ঘটনা হল তা নিয়ে স্কুলের তরফ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’’ কাটোয়া থানার পুলিশেরও দাবি, কী ভাবে দুর্ঘটনা হল খতিয়ে দেখা হবে।