সেই জমিদারি নেই, আছে শুধু ভাঙাচোরা জমিদার বাড়িটি। নিজস্ব চিত্র।
নামে তালপুকুর। ঘটি ডোবে না!
এলাকাবাসীর কাছে জমিদার বাড়ি হিসাবে পরিচিত। কিন্তু গালভরা নামটাই আছে। ভাঙা প্রাসাদ, শ্যাওলা ধরা দেওয়ালে জমিদারির নামগন্ধ নেই। শুধু পরিচিতিটুকু রয়ে গিয়েছে। আর আছে ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য রক্ষায় খাঁবাড়ির পুজোর দায়িত্ব ঘাড়ে নিলেন প্রজারা, থুড়ি গ্রামবাসীরা। জমিদারবাড়ির পুজো এখন ‘বারোয়ারি’।
পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের বনপাশ পঞ্চায়েত এলাকার বহু পুরনো গ্রাম মোহনপুর। গ্রামের মতোই পুরনো ওই গ্রামের খাঁপরিবারের দুর্গাপুজো। প্রায় ৪০০ বছরের। জমিদারি না থাকলেও জমিদারবাড়ির প্রমাণ হিসাবে ভাঙাচোরা প্রাসাদ এখনও দাঁড়িয়ে। আছে সাবেকি আমলের ভাঙাচোরা দুর্গামন্দিরও। যদিও ভগ্নদশা, তবু পুজো এলেই সেজে ওঠে মন্দিরের উঠোন। এখনও মোহনপুরবাসীদের কাছে পুজো মানেই ছিল খাঁবাড়ির পুজো। কিন্তু জমিদারবাড়ির সদস্যদের পক্ষে অর্থাভাবে সেই পুজো করাটাই দুষ্কর। তাই বলে কি পুজো বন্ধ হয়ে যাবে? মুশকিল আসানে এগিয়ে এসেছেন গ্রামবাসীরাই। তাঁরাই এ বার চাঁদা তুলে জমিদার বাড়ির পুজোর আয়োজন করেছেন। তাঁদের কাছে এ পুজো তো কেবল আনন্দ-উৎসব নয়, গ্রামের ঐতিহ্যও।
খাঁপরিবারের সদস্যা লতিকা খাঁ পুজোর কথা বলতে গিয়ে ফিরে যান পুরনো দিনে। তাঁর কথায়, ‘‘এক সময় পরিবারে স্বচ্ছলতা ছিল। তখন ধূমধাম করে পুজো হত। কয়েক’শো মানুষ টানা কয়েক দিন ধরে পুজোয় মেতে থাকতেন। তাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হত।’’ বলতে বলতে একটু থামেন লতিকা। তার পর বলেন, ‘‘এখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ। তাই পাড়ার সকলে মিলে পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন।’’
মোহনপুরের বাসিন্দা দেবাশিস সাধুর কথায়, ‘‘এ বারই নয়। গত কয়েক বছর ধরে পাড়ার লোকজনই নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে এই পুজোর আয়োজন করে আসছেন।’’ খাঁ বাড়ির পুজোর বয়স হল ৪০০ বছর। এত বছরে কত কিছুই বদলেছে। জমিদারবাড়ির পুজোও তাই বারোয়ারি। পরিবর্তন হয়তো এমনই।