ফাইল চিত্র।
কোনও রুটে মিনিবাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোথাও বা দু’-চারটি বাস চলে। বেশির ভাগ রুটে রাত হলেই দেখা মেলে না মিনিবাসের। এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়ছেন আসানসোল মহকুমার নানা প্রান্তের যাত্রীরা। পাশাপাশি, সমস্যায় পড়ছেন মিনিবাস শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবহণ কর্মীরাও।
জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যায়, সত্তেরর দশকে আসানসোল মহকুমায় প্রথম মিনিবাস চলাচল শুরু হয়। সেই সময়ে আসানসোল থেকে বরাকর, রানিগঞ্জ, বার্নপুর-সহ হাতে গোনা কয়েকটি রুটে বড় লোকাল বাস চলাচল করত। ধীরে ধীরে প্রত্যন্ত এলাকাতেও মিনিবাসের রুট তৈরি করে দফতর। বছর কয়েকের মধ্যেই শিল্পাঞ্চলে একশোরও বেশি রুটে কমবেশি সাড়ে চারশো মিনিবাস চলাচল শুরু হয়। শহরবাসীর সুবিধার পাশাপাশি, হয় কর্মসংস্থানও। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় দু’হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়। তৈরি হয় আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনও।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মিনিবাসের ‘স্বর্ণযুগ’ ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করেছে বলে জানান শহরবাসী। চিত্রটা ঠিক কেমন? মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায় জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে প্রায় ৩২টি রুটে কমপক্ষে ১৩৩টি মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি রুটে একটিও মিনিবাস চলছে না। কন্যাপুর হাউজ়িং থেকে বিএনআর মোড়, পাণ্ডবেশ্বর থেকে ছত্তিশগণ্ডা, জামুড়িয়া থেকে চুরুলিয়া, রানিগঞ্জ থেকে নূপুর রুটে আটটি করে বাস চলার কথা থাকলেও একটিও চলে না। একই ভাবে রানিগঞ্জ থেকে তিরাট, আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে আসানসোল আদালত রুটে ছ’টি করে, রানিগঞ্জ থেকে মেজিয়া ঘাট, হরিপুর থেকে তপসি রুটে ১২টি করে, রানিগঞ্জ থেকে জেকে নগর রুটে সাতটি, মেজিয়া ঘাট থেকে বাঁশড়া ও মেজিয়া ঘাট থেকে কুনস্তরিয়া রুটে চারটি করে, রানিগঞ্জ থেকে ধাণ্ডারডি পর্যন্ত রুটে তিনটি মিনিবাস চলার কথা। কিন্তু একটি মিনিবাসও চলে না। অথচ, পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই রুটগুলি খাতায়কলমে এখনও রয়েছে।
সম্প্রতি আসানসোলের কন্যাপুর, সেনর্যালে, গোপালপুরের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে এলাকায় মিনিবাস চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফের মিনিবাস চলাচল শুরুর দাবিতে মহকুমা পরিবহণ দফতর, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পরিবহণ) প্রশান্ত মণ্ডল এবং আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির কাছে গণ-সই সম্বলিত চিঠিও দিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু চিঠি বা আর্জি প্রসঙ্গে প্রশাসন কী বলছে, বাস বন্ধে কর্মহীন পরিবহণ কর্মীদের বক্তব্যই বা কী, এই পরিস্থিতিতে কী কী সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা, কেনই বা রুটের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও চলছে না বাস— এমনই নানা প্রশ্ন উঠে আসছে জেলার গণ পরিবহণ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে।