Al Qaeda

রাজ্যে ধৃত জঙ্গিদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থেকে পরিযায়ী শ্রমিক

ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থেকে পরিযায়ী শ্রমিক— কী ভাবে জঙ্গিদের এই মডিউলে জুড়ে গেলেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৪:২৮
Share:

রিজওয়ানের মতোই, ছেলের গ্রেফতারির পরে কার্যত অন্ধকারেই মইনুল মণ্ডলের বাবা সারফান। নিজস্ব চিত্র।

ছোট ভাই আল কায়দা জঙ্গি! কথাটা কোনও ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না রিজওয়ান আলি। তাঁর ছোট ভাই নাজমুস সাকিব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। শনিবার সকালে সেই নাজমুসকেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেছেন। ফলে, কেমন যেন ঘোরের মধ্যেই রয়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের রিজওয়ান। বারে বারেই বলে উঠছেন, ‘‘এ কথা বিশ্বাস করি না।’’

Advertisement

রিজওয়ান জানান, এ দিন সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের ডোমকলের বাড়িতে হানা দেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। নাজমুসের খোঁজ করেন। সেই সময় রিজওয়ানের পাশেই নাজমুস দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরিচয় জানার পর বছর একুশের নাজমুসকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে রিজওয়ানের দাবি। তাঁৱ কথায়, ‘‘আমার ছোট ভাই ডোমকলের বসন্তপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ও কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। দিল্লি তো দূর অস্ত্, আমার ভাই কখনও কলকাতাতেও যায়নি। আমি দিনে ২০-৫০ টাকা হাত খরচ দিই। সাইকেলে করে ঘুরে বেড়ায়। ভাই নির্দোষ।”

এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোয়েন্দারা নাজমুসের মোবাইল ফোন, চার্জার এবং রিজওয়ানের একটি বাতিল ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছেন। নিয়ে গিয়েছেন বেশ কিছু ধর্মীয় কাগজপত্রও। যদিও রিজওয়ানের দাবি, ‘‘ধর্মীয় কাগজ বলতে বাংলায় লেখা রাতে নমাজ পড়ার পদ্ধতি।’’

Advertisement

নাজমুসের মতো তাঁর ছেলেও কলেজ পড়ুয়া বলে দাবি করেছেন জলঙ্গির ঘোষপাড়ার বাসিন্দা আতিউর রহমানের মা নাজিরা বিবি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে নদিয়ার করিমপুরে নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র। করোনা পরিস্থিতির কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় বাড়িতেই থাকতেন তিনি। এলাকাতেও বিশেষ মেলামেশা করতেন না। গোয়েন্দারা তাঁর বাড়ি থেকেও বেশ কিছু নথি এবং মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছেন।

আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদ থেকে এনআইএ-র হাতে পাকড়াও ৬ আল কায়দা জঙ্গি

আরও পড়ুন: ‘টাইম বোমা’ কিনা ধন্দই

ছেলের গ্রেফতারির পরে কার্যত অন্ধকারেই রয়েছেন মইনুল মণ্ডলের বাবা সারফান। মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গির পদ্মা পাড় ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রাম মধুবোনা। সেখানকার বাসিন্দা মইনুল। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। কেরলে কাজ করতেন। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আরও অনেক পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে সাড়ে তিন মাস আগে বাড়িতে ফেরেন। মইনুলের মায়ের কথায়, ‘‘আজ ভোরে ছেলে শৌচাগারে গিয়েছিল। তখনই পুলিশ আসে। বলে দিল্লি থেকে এসেছে। ওর খোঁজ করে।” এর পর শৌচাগার থেকেই মইনুলকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন সারফান। গোয়েন্দারা গোটা বাড়ি তল্লাশি করে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মইনুলের মতোই পরিযায়ী শ্রমিক আল মামুন কামাল। ডোমকলের রায়পুর-নাড্ডাপাড়ায় বাড়ি তাঁর। বছর পঁয়ত্রিশের মামুন আগে বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। দু’বছর আগে বাড়ি ফিরে আসেন। তার পর থেকে গ্রামেই কখনও রাজমিস্ত্রি, কখনও বা গাড়ি চালানোর কাজ করতেন। তাঁর বাবা ফরজ আলি মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘‘আজ সকালে পুলিশ আসে। বলে, দিল্লি থেকে এসেছে। ওরা মামুনকে ধরে নিয়ে যায়। কিছু ধর্মীয় কাগজপত্রও নিয়ে গিয়েছে।”

বছর চল্লিশের আবু সুফিয়ানের বাড়ি ডোমকলে। পেশায় বর্তমানে দর্জি। ধৃত ছ’জনের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। একটা সময়ে তিনি পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে দীর্ঘ দিন দিল্লিতে কাজ করলেও সম্প্রতি তিনি বাড়িতে একটি লেদ কারখানা খুলেছেন। প্রতিবেশীদের দাবি, আবু সুফিয়ান পাড়ায় বিশেষ মেলামেশা করতেন না। তবে এলাকার মানুষ তাঁকে কোনও দিন কোনও গন্ডগোলে জড়াতে দেখেননি। প্রতিবেশীদের একটা অংশের দাবি, আবু সুফিয়ানের পরিবার ওই এলাকার শিক্ষিত বলেই পরিচিত। আবু নিজেও এক সময় মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন। দিল্লিতেও তিনি একটি মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত ষষ্ঠ সন্দেহভাজন আল কায়দা জঙ্গি লিউ ইয়ান আহমেদ। তিনি পেশায় ইলেকট্রিক মেকানিক। স্থানীয় একটি বেসরকারি কলেজে চুক্তিভিত্তিক ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতেন। গোয়েন্দাদের দাবি, এরা প্রত্যেকেই পূর্ব পরিচিত। অনলাইনে তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তাঁদের মডিউলকে নির্দেশ দেওয়া হত পাকিস্তান থেকে। ধৃতদের মোবাইল থেকে একাধিক জিহাদি চ্যাট গ্রুপে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থেকে পরিযায়ী শ্রমিক— কী ভাবে জঙ্গিদের এই মডিউলে জুড়ে গেলেন? গোয়েন্দাদের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়েই নিজেদের আড়াল করে কেরল থেকে বাংলা পর্যন্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল এই মডিউল। কেরলে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁরাও পরিযায়ী শ্রমিক। আর নাজমুসের ক্ষেত্রে গোয়েন্দাদের দাবি, অনলাইনে তাঁর মগজধোলাই করে দলে টানা হয়েছিল। অনলাইনে পড়ানো হয়েছিল জিহাদি পত্রপত্রিকা। উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল আল কায়দায় নাম লেখাতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement