স্কুল ছুটির পরে মোবাইলে চোখ। বৃহস্পতিবার পার্ক সার্কাসে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে আদৌ কি খেতে পাচ্ছে পড়ুয়ারা? না কি এক টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অনেক পড়ুয়াই না খেয়ে আছে? করোনা কালে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার পরে গত ১৬ নভেম্বর স্কুল খোলার পরে এই চিন্তাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে বহু শিক্ষক শিক্ষকদের মধ্যে। কারণ নবম থেকে দ্বাদশের জন্য এখন মিড ডে মিলেরও ব্যবস্থা নেই। মিড ডে মিল দেওয়া হয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
করোনা পরিস্থিতি ভাল হওয়ার পরে গত ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুল খুলেছে। স্কুল খোলার আগে পড়ুয়া, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের জন্য গাইডলাইন প্রকাশ করেছে শিক্ষা দফতর। কী ভাবে করোনা বিধি মেনে স্কুলে থাকতে হবে, পড়ুয়াদের তা স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। সেই গাইডলাইনেই বলা হয়েছে, টিফিন পিরিয়ডে কেউ ক্লাসের বাইরে বেরোবে না। নিজের টিফিন নিজে খাবে। অন্যের টিফিন ভাগ করে খাওয়া চলবে না। টিফিন পিরিয়ডেও একজন শিক্ষককে পড়ুয়াদের উপর নজর রাখতে হবে।
শিক্ষকদের একাংশের মতে, গ্রামাঞ্চলে বহু স্কুলের পড়ুয়ার তো টিফিন আনারই অভ্যাস নেই। আর্থিক ভাবে দুর্বল অনেক পরিবারের পক্ষে শিশুদের জন্য টিফিন বানিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। হাওড়ার দুইল্যা পাঁচপাড়া স্কুলের শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, “আমার স্কুলের এমন অনেক পড়ুয়া আছে, যার মা বাড়ির পরিচারিকার কাজ করতে অনেক সকালে বেরিয়ে যান। বাবা জন মজুর খাটতে বেরিয়ে যান সকালে। ওই সব পড়ুয়া বাড়ি থেকে গুছিয়ে টিফিন আনার কথা ভাবতেই পারে না। তারা সঙ্গে করে পাঁচ, দশ টাকা নিয়ে আসে। টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের বাইরে থেকে ঝালমুড়ি বা এরকম কিছু খেয়ে নেয়। তারা কি এ বার না খেয়ে থাকবে?”
স্কুল শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছে, অনেকের আবার সামর্থ্য থাকলেও টিফিন করে দেওয়ার মতো সময় নেই বাড়ির লোকের। তারাও বাইরে থেকে টিফিন কিনে খায়।
শিক্ষক নেতা নব কুমার কর্মকার বলেন, “এখন সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা স্কুলে থাকার সময়সীমা। এর মধ্যে টিফিন না নিয়ে এলে বহুক্ষণ খালি পেটে থাকতে হবে ছাত্রদের। খবর নিয়ে দেখেছি সকাল সাড়ে নটার মধ্যে স্কুলে আসতে গিয়ে নবম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অনেকে সকালের বাড়ি থেকে টিফিন আনা তো দূরের কথা, রোজ ঠিক মতো ভাতও খেয়ে আসতে পারবে না। কারণ, অত সকালে সকলের বাড়িতে রান্না শেষ হয় না। মুড়ি খেয়ে চলে আসে। তাই স্কুল শুরুর সময় সকাল দশটা না করে আরেকটু দেরী করে দশম ও দ্বাদশের মতো সকাল এগারোটা থেকে করা যেতে পারে।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “করোনা কালে স্কুলে টিফিন না নিয়ে এসে স্কুল গেটের বাইরে দাঁড়ানো ফেরিওয়ালাদের থেকে খাবার কিনে টিফিন খাওয়াটাও তো ঠিক নয়। আবার বাড়ি থেকে সবাই টিফিন আনতে পারছে না। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা মিড ডে মিলের আওতাতেও পড়ে না। তাই অন্তত স্কুল খোলার প্রথম কয়েকটা মাস যদি শিক্ষা দফতর পড়ুয়াদের জন্য কিছু শুকনো খাবার টিফিনের সময় বরাদ্দ করে দেয় তা হলে সব শ্রেণির পড়ুয়ারাই উপকৃত হবে।”