Mamata Banerjee

মমতা-অভিষেকের ‘ঘেরাও কর্মসূচি মারাত্মক এবং বিপজ্জনক’! বিরোধিতা করে বলল এপিডিআর

শুক্রবার ধর্মতলার সভামঞ্চ থেকে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরার করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মমতা এবং অভিষেক। এই কর্মসূচিকে ‘চরম অগণতান্ত্রিক এবং বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছে এপিডিআর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩ ১৭:৪৬
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবিতে বাঁ দিকে) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার যে কর্মসূচি শুক্রবার ধর্মতলায় তৃণমূলের সভামঞ্চ থেকে ঘোষিত হয়েছিল, তার বিরোধিতা করে বিবৃতি জারি করল গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন এপিডিআর। তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মূল সমাবেশস্থল ধর্মতলার মঞ্চ থেকে প্রথম এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বক্তব্য রাখতে উঠে এই কর্মসূচির কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার এই কর্মসূচিকে ‘চরম অগণতান্ত্রিক, মানবতাবিরোধী ও বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছে সংগঠনটি।

Advertisement

শনিবার এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূরের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তৃণমূলের সভামঞ্চ থেকে বিজেপি নেতাদের তালিকা তৈরি করে বাড়ি ঘেরাও করার কথা বলা হয়েছিল। বিবৃতিতে এই কর্মসূচিকে হিটলারের জার্মানির সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়, “শাসকদলের এই তালিকা তৈরি আমাদের জার্মানিতে হিটলারের সময় খুঁজে খুঁজে ইহুদিদের তালিকা তৈরির কথা মনে করিয়ে দিল। এ ভাবে ভিন্ন চিন্তার রাজনৈতিক কর্মীদের দাগিয়ে দেওয়া এবং পরিবার, পরিজন-সহ তাঁদের বাসস্থানকে ঘেরাও করা মারাত্মক ব্যাপার।

শুক্রবার ধর্মতলার সভা থেকে জোড়া সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। তার প্রথমটি হল, ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে ২ অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তীতে দিল্লি অভিযান। দ্বিতীয়, কেন্দ্রীয় ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে ৫ অগস্ট রাজ্যের বুথে বুথে, ব্লকে ব্লকে, জেলায় জেলায় বিজেপি নেতাদের বাড়ি গণঘেরাও। দ্বিতীয় কর্মসূচির নকশাও মঞ্চ থেকে বলে দেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখবেন! একদম গণঘেরাও! বাড়ির কেউ বয়স্ক থাকলে তাঁকে ছেড়ে দেবেন। আর কাউকে ঢুকতেও দেবেন না, বেরোতেও দেবেন না।’’

Advertisement

কিন্তু অভিষেকের পরেই বক্তৃতা করতে উঠে মমতা বুঝিয়ে দেন, এতটা ‘আগ্রাসন’ কাঙ্ক্ষিত নয়। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী বলেন, ‘‘অভিষেক ৫ অগস্ট একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমি বলব, ওটা ব্লকে ব্লকে করা হোক। শান্তিপূর্ণ ঘেরাও করো। বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে। ভোটের সময় যেমন বুথের ১০০ মিটার দূরে জমায়েত করা যায়। যাতে কারও ঢুকতে-বেরোতে অসুবিধা না-হয়।’’ অভিষেকের ঘোষণায় ওই ‘সংশোধন’ করার পাশাপাশি, ‘প্রতীকী’ শব্দটিও ব্যবহার করেন মমতা। তৃণমূলের অনেকের মতে, পাঁচ দশকেরও বেশি রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার সুবাদে পোড়খাওয়া রাজনীতিক মমতা বুঝেছেন, রাজ্যের প্রতিটি বুথে যদি বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে তৃণমূলের জমায়েত, তা হলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এপিডিআর-এর বিবৃতিতে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যের ‘প্রাপ্য’ ১০০ দিনের কাজের টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি এই প্রকল্পে দুর্নীতিকারীদের সাজা দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার এপিডিআর-এর একটি আলোচনাসভা থেকেই খোলা চিঠি পাঠ করেন বিশিষ্টজনেদের একাংশ। চিঠিতে মমতাকে উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘‘গত ৩৭ দিনে পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বহু মানুষ নিখোঁজ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আপনি এই দায় কোনও ভাবেই অস্বীকার করতে পারেন না। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব অস্বীকার না করেও বলা যায়, এই হত্যালীলা, অরাজকতার দায়িত্ব মূলত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এবং আপনার। স্থানীয় প্রশাসনের ওপর নির্ভর করেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে চলতে হয়।’’ এই বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন অপর্ণা সেনও। বৃহস্পতিবার ভারতসভা হলে ওই আলোচনাচক্রের শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে একদা পরিবর্তনকামী বিশিষ্টজন বলে পরিচিত অপর্ণা বলেন, “এই পরিবর্তন আমরা কেউ চাইনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement