অনুপম হাজরা। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার বঙ্গ সফরের মাঝে পদ হারিয়েছেন অনুপম হাজরা। বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পরও অনুপম অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁকে শর্তসাপেক্ষে আবার ওই পদ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পুরো ঘটনায় যে তিনি কিঞ্চিৎ অস্বস্তিতে, তা বোঝা গেল বুধবার দুপুরে। বোলপুর মহকুমা আদালতে একটি পুরনো মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন বিজেপি নেতা। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্ন এড়ালেন অনুপম। প্রথমে হাসি-হাসি মুখ করে অনুপম জানালেন এখন তাঁর কিচ্ছু বলার নেই। প্রথমে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে সবাইকে চুপ করতে বলেন। তার পর উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’ আবার তিনি কি তৃণমূলে ফিরবেন? এই প্রশ্ন করতেই মুখ খুললেন অনুপম। তাঁর জবাব, ‘‘আমি এখন দু’দিনের জন্য হিমালয়ে থাকব। তার পর যা বলার বলব।’’
বস্তুত, বিজেপির সর্বভারতীয় পদে থেকেও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সমালোচনা এবং অনুপমের শাসক-ঘেঁষা অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু দিন গেরুয়া দলের অন্দরে তোলপাড় চলছিল। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে নিয়ে অনুপমের কটাক্ষ এবং সে সময় ফলক বিতর্কে তৃণমূলের মঞ্চে বিজেপি নেতার যোগদান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে অনুপমকে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে ফেসবুকে পোস্টে অনুপম দাবি করেছেন, শর্তসাপেক্ষে তাঁকে পদ ফেরানোরও কথা বলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও তাতে পাত্তা দেননি রাজ্য বিজেপির একাংশ। তার মধ্যে শুরু হয়েছে অনুপমের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে জল্পনা।
তৃণমূল ছেড়ে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে চলে যান বিশ্বভারতীর প্রাক্তন শিক্ষক অনুপম। বিজেপি তাঁকে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে টিকিট দেয়। যদিও তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীর কাছে পরাজিত হন অনুপম। ভোটের অনেক পরে বিজেপির সর্বভারতীয় পদ অনুপম। সামনে আবার একটি লোকসভা ভোট। তাই পদ হারানো পদ্ম নেতা অনুপম আবার তৃণমূলে ফিরবেন কি না, এ নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে বীরভূমে। অনুপমকে নিয়ে বীরভূমের জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ যেমন বলছেন, ‘‘ও শিক্ষিত ছেলে, ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে আমি মিশেছি। ওর মতো বিজেপির যে কেউ আমাদের উন্নয়ন যজ্ঞে শামিল হতে চাইলে তাঁদের স্বাগত।’’ অনুপম এবং কাজলের সুসম্পর্কের কথা বীরভূমের রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত।
২০১৪ সালে অনুপম যখন বোলপুরের সাংসদ নির্বাচিত হন, তখন অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কাজলের সম্পর্ক কার্যত ‘আদায় কাঁচকলায়’। অনুপমকে জেলার মধ্যে নানুরে সব থেকে বেশি লিড পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্যে কাজলের ভূমিকা ছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিন বোলপুর গণনাকেন্দ্রের সামনে অনুপমকে বুকে জড়িয়ে ধরলেও অনুব্রতের সঙ্গে একটি কথা বলতেও শোনা যায়নি কাজলকে। অনুপম বিজেপিতে যাওয়ার পরেও একে অন্যের বিরুদ্ধে একটিও কুবাক্য খরচ করেননি। স্বভাবতই অনুপম সম্পর্কে কাজলের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে বিজেপির অভ্যন্তরেও জল্পনা চলছে। তবে এ নিয়ে এখন কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না অনুপম। আপাতত সব কিছু ফেলে হিমালয় সফর নিয়ে ভাবছেন এই পদ্ম নেতা।