বীরভুম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র
অনুব্রত মণ্ডল কি শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠকে আসবেন? এমনই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলার শাসকদলের অন্দরে। এবং সেই আলোচনা ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। কারণ,পরিকল্পনা মতো তৃণমূলের নতুন তথা অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন মমতা। বৈঠকে ডাকা হয়েছে দলের সমস্ত জেলা সভাপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদ, গুরুত্বপূর্ণ বিধায়ক ও শাখা সংগঠনের সভাপতি এবং কোর কমিটির সদস্যদের। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি হওয়ার সুবাদে ওই বৈঠকে থাকার কথা অনুব্রতেরও। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সিবিআইয়ের সঙ্গে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ চলছে বীরভূমের এই দাপুটে তৃণমূল নেতার। কখনও গরুপাচার, কখনও কয়লা পাচার আবার কখনও আবার সন্ত্রাস মামলায় জেরার জন্য বারবার তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু অনুব্রত কখনওই যাননি।
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অন্তত ছ’বার সিবিআইয়ের ডাক ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এমনকি, একাধিক বার আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু আদালত তাঁকে শেষপর্যন্ত ‘রক্ষাকবচ’ দেয়নি। সর্বশেষ বার অনুব্রত নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হতে গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে এসএসকেএমে ঢুকে পড়েন। সেখানে উডবার্ন ওয়ার্ডে তিনি বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীনও ছিলেন। আপাতত তিনি বাড়িতেই চিকিৎসকদের নজরবন্দি রয়েছেন।
তবে সম্প্রতি তাঁর আইনজীবী মারফত অনুব্রত চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ২১ মে-র পর কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৈরি থাকবেন। ২১ মে-র পরে কথা বলে যেখানে ঠিক হবে, সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। আলোচনার পর জায়গা ঠিক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআইয়ের অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চ, স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। এমতাবস্থায় শাসক দলের একাংশ চাইছে, অনুব্রত যাতে কোনওভাবেই দলীয় বৈঠকে না আসেন। আপাতত তিনি আছেন রাজারহাটের চিনার পার্কে তাঁর বাড়িতে। এসএসকেএম থেকে ছাড়া পাওয়ার পর চিনার পার্কে থেকেই নিজের চিকিৎসা করাচ্ছেন অনুব্রত, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। তাই দলের নেতারা চাইছেন, অনুব্রত আচমকাই বৈঠকে হাজির হলে জনমানসে ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে। কারণ, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে একাধিকবার সিবিআইয়ের জেরা এড়িয়ে গিয়েছেন অনুব্রত। সেখানে ‘অসুস্থতা’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে অনুব্রত হাজির হলে দল তাঁর সঙ্গে সরাসরি জড়িত যেতে পারে। একটি সূত্রের দাবি, এমন ভাবনা থেকে অনুব্রতকে বৈঠকে অনুপস্থিত থাকতেই বলা হচ্ছে। তবে এর কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি।
অনুব্রতর বৈঠকে যোগদান বা না-যোগদান নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কোনও তৃণমূল নেতা। তবে বুধবার এক তৃণমূল নেতা একটু ঘুরিয়ে বলেন, ‘‘যদি কেউ অসুস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি কেন আসবেন বৈঠকে? খুব প্রয়োজন হলে বৈঠকের বার্তা কোনও নেতা মারফত তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতেই পারে।’’ তাঁর তৃণমূলের বৈঠকে যোগদান প্রসঙ্গে জানতে অনুব্রতের মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তাঁ ফোন সবসময়েই বেজে গিয়েছে।