বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
গরুপাচার মামলায় ১০ বার ডেকেছে সিবিআই! তিনি হাজিরা দিয়েছেন মাত্র এক বার! ‘বাড়াবাড়ি’ করে ফেলে এ বার কি আতঙ্কে ভুগছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন? ‘কেষ্ট’র মনের অবস্থা সরাসরি জানা না গেলেও, তাঁর ঘনিষ্ঠ বা অনুগামীরা অবশ্য প্রকাশ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এক ঘনিষ্ঠ বলেই ফেললেন, “এর আগেও অসুস্থতার জন্য কেষ্টদা সিবিআই সমন এড়িয়ে গিয়েছেন। মাত্র এক বার হাজিরা দিয়েছেন। এ বার সিবিআই কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেবে না তো? ভয় হয়!”
বার বার হাজিরা এড়াতে কখনও বাড়িতে থেকেও অসুস্থ, কখনও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি— বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি। অনেকে এগুলিকে ‘অজুহাত’ হিসাবেই দেখছেন। সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম যে অনুব্রতের জন্য অস্বস্তিকর, ঘনিষ্ঠরা তা স্বীকার করছেন। এসএসকেএম হাসপাতাল তাঁকে ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার পর, বিড়ম্বনায় ফেলেছে তাঁর জেলার মহকুমা হাসপাতালও। অনুব্রতের এক ঘনিষ্ঠের যুক্তি, কাউকে হাসপাতালে ভর্তি না নিলেই সুস্থ বলা যায় না। দাদার যে ‘কিছু অসুখ’ রয়েছে সে কথা তো সত্যি! আর এক ঘনিষ্ঠ জানাচ্ছেন, বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল অনুব্রতের ফিসচুলার সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছে। এই অবস্থায় তিনি চেন্নাইতে যেতে পারেন চিকিৎসা করাতে। তবে সে ক্ষেত্রেও অনেকেই মনে করছেন, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আর কত দিন তিনি এ ভাবে সিবিআইকে এড়িয়ে চলতে পারবেন? ফের রেহাই মিলবে কি? না কি, শীঘ্রই তাঁকে পড়তে হবে সিবিআইয়ের মুখে!
বুধবার অনুব্রতের আইনজীবী সিবিআইকে চিঠি দিয়ে আরও কিছু দিন সময় চান। সূত্রের খবর, ওই চিঠিতে অনুব্রত বলেছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়! আরও ১৪ দিন সময় দেওয়া হোক তাঁকে। অসুস্থতা জেনেও যে ভাবে সিবিআই তাঁকে সমন করেছেন, তাতে তিনি স্তম্ভিত বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। ওই সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, ওই চিঠির প্রেক্ষিতে সিবিআই কোনও উত্তর দেয়নি। সিবিআইয়ের কলকাতার অফিস জানিয়েছে, দিল্লির অফিস থেকে পুরো বিষয়টির উপর নজরদারি চলছে। অনুব্রতের এই আর্জি সেখানে পাঠানো হবে। যা সিদ্ধান্ত, তা নেবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, অনুব্রতের আবেদন-সহ চিকিৎসা সংক্রান্ত গত তিন দিনের যাবতীয় ঘটনাক্রম সংস্থার দিল্লির অফিসকে জানানো হয়েছে। এই মুহূর্তে অনুব্রতের ঘনিষ্ঠদের মনে তাঁর গ্রেফতারির আশঙ্কা তীব্র হয়েছে। এবং, এই মুহূর্তে কোনও আইনি রক্ষাকবচও নেই কেষ্টর। কলকাতা হাই কোর্টের একক বেঞ্চ এবং প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ অনুব্রতের আবেদন খারিজ করে দেয় আগেই। ফলে এখন অনুব্রতকে গ্রেফতার করতে সিবিআইয়ের সামনে কোনও বাধা নেই। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী জানাচ্ছেন, আইনি পথ এখনও খোলা রয়েছে। দু’টি পদক্ষেপ করা হতে পারে। এক, হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া। দুই, অসুস্থতার হেতু ফের হাই কোর্টকেই রায় বিবেচনা করতে বলা যেতে পারে।