মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
এ রাজ্যে এনআরসি নিয়ে বেশি কথা বলার দরকার নেই বলে বিজেপি নেতাদের পরামর্শ দিয়ে গেলেন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তার বদলে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে প্রচারে জোর দিতে বললেন তিনি।
মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সভাতেও তিনি এনআরসি চালু করার বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ করে মূলত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) উপরেই জোর দেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই বিল লাগু করে তবেই এনআরসি করা হবে। বিলে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টানদের এ দেশে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। শরণার্থীদের ঘরে ঘরে এটা প্রচার করতে হবে দলীয় নেতা-কর্মীদের।’’
এনআরসি-বার্তা দেওয়ার জন্য শাহের এই সফরের প্রস্তুতি চলছিল মাসখানেক ধরে। মঙ্গলবার শাহ যখন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ঢোকেন, তখন কানায় কানায় ভর্তি স্টেডিয়াম। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু করার মিনিট পাঁচেক পর থেকেই খালি হতে শুরু করে স্টেডিয়াম। এনআরসি নিয়ে তিনি যখন বলছেন, তখন কার্যত ফাঁকা হয়ে গিয়েছে গ্যালারি। তাঁর ২৭ মিনিটের বক্তৃতা শেষ পর্যন্ত শুনেছেন স্টেডিয়ামের ফ্লোরে বসে থাকা দলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক এবং ভিআইপিরা।
এনআরসি-র বিরুদ্ধে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই সরব হয়েছেন। অসমে এনআরসি-তে প্রায় ২০ লক্ষ লোকের নাম বাদ যাওয়ার পরে তাঁর অভিযোগ, ওই রাজ্যে যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদের একটি বড় অংশ অ-মুসলিম এবং বঙ্গভাষী।
এনআরসি আতঙ্ক ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা ঘোষণা করেছেন, তিনি এখানে কোনও ভাবেই এনআরসি হতে দেবেন না।
শাহ অবশ্য এ দিন পাল্টা বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে মমতাদিদি বাংলার মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। শরণার্থীদের এক জনকেও দেশ ছেড়ে যেতে হবে না। তবে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানো হবেই।’’
কিন্তু এনআরসি আতঙ্ক এ রাজ্যের মানুষের মধ্যে বিজেপি বিরোধী মনোভাব তৈরি করতে পারে বলে ওই দলের অন্দরেই অনেকের আশঙ্কা। বস্তুত, এই অবস্থায় শাহের এ দিনের বক্তব্যকে দলের ‘সতর্ক’ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। ভোটের পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এলেন, বললেন, কিন্তু জয় করলেন কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য বিজেপির একাংশেই।
কেন চলে গেলেন দলীয় কর্মী এবং দর্শকেরা? প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও রাজ্য বিজেপির একাংশের বক্তব্য, এনআরসি নিয়ে কার্যত কোনও দিশা এ দিন তিনি দেখাতে পারেননি।
বিগত কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করতে না পারার দায়ও এ দিন তৃণমূলের উপরেই চাপিয়েছেন শাহ। তাঁর কথায়, লোকসভায় বিলটি পাশ হলেও রাজ্যসভায় তৃণমূল-সহ বেশ কিছু দল বিলটির বিরোধিতা করে। সে কারণেই তা পাশ করা যায়নি। তবে এ বার তা সহজেই পাশ হয়ে যাবে বলে তাঁর দাবি।
কাশ্মীর প্রসঙ্গেও এ দিন বক্তৃতা করেন শাহ। ৩৭০ অনুচ্ছেদের অবলুপ্তির সাফল্য বলতে গিয়ে একাধিকবার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথা বলেন শাহ। ৩৭০ প্রসঙ্গে তৃণমূলের অবস্থানের সমালোচনাও করেন তিনি। পাশাপাশি সমালোচনা করেন বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।
এ দিন শাহের উপস্থিতিতেই বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূলের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তাঁকে যোগদান করান বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। আর তাঁর হাতে পতাকা তুলে দেন দিলীপবাবু। বিধাননগর পুরসভার দুই কাউন্সিলরও এ দিন তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে যোগদান করেন।
সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে এ দিন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও আদর্শের জন্য গেলে বুঝতাম। উনি তো গিয়েছেন সুবিধার জন্য।’’
অমিত শাহের এ দিনের বক্তৃতার কটাক্ষ করে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরির প্রচেষ্টা বন্ধ করুন। সাংবিধানিক ভাবে এ দেশে সকলের সমান অধিকার।’’