নেতাজি ইনডোরের মঞ্চে অমিত শাহ। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলায় জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) চালু হবেই। কোনও ভাবেই তা রুখতে পারবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘মমতাদিদি নিজেই এক সময় অনুপ্রবেশকারীদের বার করে দেওয়ার কথা বলতেন। এখন ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে এনআরসি হতে দিতে চাইছেন না।’’
এনআরসি নিয়ে তৃণমূল-কংগ্রেস ভীতি সৃষ্টি করছেন বলেও এ দিন অভিযোগ করেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করতে ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, হিন্দুদেরও তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এর চেয়ে বড় মিথ্যা হতে পারে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ শরণার্থীদের কেউ দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করবে না। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে শরণার্থীরাও দেশের নাগরিক হিসাবে সমস্ত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন তাঁরা।’’
৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়েও এ দিন তৃণমূল-কংগ্রেসকে এক হাত নেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন মোদীজি। তাই বাংলার মানুষও ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। অথচ ৩৭০ ধারা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারছে না তৃণমূল। সংসদে ভোটাভুটির সময়ে ওরা ওয়াকআউট করেছিল।’’
অমিত শাহ বলেন—
• বাংলায় পরিবর্তন আনতেই হবে।
• ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন মোদীজি। গত ২২ বছরে কখনও ছুটি নেননি। ভারতের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করেছেন বহু বছর পর ভারতে এমন এক জন নেতা এসেছেন।
• বাংলার কৃষক কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো টাকা পাচ্ছেন না।
• সারদা, রোজভ্যালি দুর্নীতি, সিন্ডিকেট রাজত্ব নিয়ে কিছু বলব না। কিন্তু দরিদ্র মানুষের জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছতে দেননি মমতাদি। যে কারণে বাংলার মনুষ ৫ লক্ষ পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। মোদীজির জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে বলে তা চালু হতে দেননি মমতাদি।
• রাম নবমী পালনে বাধা সৃষ্টি করার ক্ষমতা আর কারও নেই। এ বার সরকার গড়তে দিন আমদের। তাহলে বাংলার ভোল পাল্টে যাবে।
• বাংলায় আইন-শৃঙ্খলার কী পরিস্থিতি তা ভাল করেই জানেন আপনারা। আমাদের ১৮টি আসন দিয়েছেন আপনারা। তাতেই ফল দেখুন। আগে দুর্গা বিসর্জনের জন্য আদালতে ছুটতে হত। আর আমি নিজে এসেছি মা দুর্গার আরতি করার জন্য।
• বাংলার মানুষ কমিউনিস্টদের কেন তাড়িয়েছিলেন? এই দিন দেখার জন্য?
• বিজেপি কর্মীদের কাছে আমার অনুরোধ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। ওঁদের বোঝান, কেউ ঘাড় ধরে বার করে দেবে না।
• দিদি, রাজনৈতিক স্বার্থ দেশের ঊর্ধ্বে নয়। সে কথা মাথায় রেখেই কাজ করেছি আমরা।
• কোনও দেশ কোটি কোটি অনুপ্রবেশকারীদের বোঝা বইতে পারে না। তাই এনআরসি করতেই হবে। তবে বাংলার দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব হবে। নইলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
• এই মমতাদিদি এক সময় অনুপ্রবেশকারীদের বার করে দেওয়ার কথা বলতেন। এখন ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে এনআরসি হতে দিতে চাইছেন না।
• দিদি বলছেন এনআরসি হতে দেবেন না। আমি বলছি, ভারতে কোনও অনুপ্রবেশকারীদের থাকতে দেব না। বেছে বেছে তাড়াব সকলকে।
• এই বিলই রাজ্যসভায় পাশ হতে দেয়নি তৃণমূল-কংগ্রেস। যাঁরা আজও ভারতের নাগরিক হতে পারেননি, তৃণমূল-কংগ্রসেই তা হতে দেয়নি।
• আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে শরণার্থীরাও দেশের নাগরিক হিসাবে সমস্ত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
• সিএবি বিলের আওতায় ভারতের সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ শরণর্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
• বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা বোঝানো হচ্ছে।
• আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, হিন্দু, বৌদ্ধ শরণার্থীদের কেউ দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করবে না।
• এনআরসি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে হিন্দুদেরও তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এর চেয়ে বড় মিথ্যা হতে পারে না।
• কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনও সঙ্কোচ নেই। ৩৭০ ধারা হটিয়ে কাশ্মীরকে চিরকালের জন্য ভারতের অংশ করে নিয়েছি আমর। শ্যামাপ্রসাদকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়েছেন মোদিজি।
• কেউ উপস্থিত ছিল না সংসদে।
• সংসদে ৩৭০ ধারা হটার সময় তৃণমূল সাংসদরা কোথায় ছিলেন?
• বাংলার মানুষও চেয়েছিলেন ৩৭০ ধারা হটুক।
• কিন্তু মমতাদি আপনাকে ইতিহাস পড়ে শোনাই, বাংলা যখন পাকিস্তানের দখলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ই বঙ্গভঙ্গ করিয়ে বাংলাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করিয়েছিলেন।
• বলা হচ্ছে বিজেপি বাইরের দল। বাংলায় তাদের প্রয়োজন নেই।
• তাই ক্ষমতয় এসেই ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছেন মোদীজি।
• এই বাংলার সুপুত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন এক দেশে দুই নীতি চলবে না। তার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর জেলেই মৃত্যু হয় তাঁর। কংগ্রেস ভেবেছিল সমস্যা মিটে গিয়েছে। কিন্তু আমরা বিজেপি একবার কিছু ঠিক করে নিলে পিছু হটে না।
• ৩৭০ ধারা বিলোপের জন্য গোটা দেশ মোদীজির প্রশংসা করছেন।
• বিজেপি কর্মীদের উপর লাগাতার হামলা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ওই শহিদ কর্মীদের হয়ে তর্পণ করে গিয়েছেন জেপি নড্ডা।
• বাংলা বিজেপিময় হয়ে গিয়েছে। তাই ৪০ শতাংশ ভোট এসেছে বিজেপির ঝুলিতে।
• ১৮ আসনে জিতিয়ে বাংলার মানুষও পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির সরকার গড়ে উঠবে।
• নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দ্বিতীয় বার কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। আর এতে সবচেয়ে বেশি যোগদান বাংলার মানুষের। তাই সকলকে ধন্যবাদ জানাি। বাংলার মনুষ পরিবর্তন না ঘটালে ৩০০ াসন পার করতে পারত না বিজেপি।
• বাংলার সাধারণ মনুষকে দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা জানাই।
• ৩৭০ ধারা বিলোপ করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন মোদীজি।
দিলীপ ঘোষ বলেন—
• বাংলার মানুষ বিজেপিকে বিকল্প হিসাবে পেয়েছেন। আগামী দিনে কোনও হিন্দুকে বাংলা থেকে কেউ তাড়াতে পারবে না।
• পশ্চিমবঙ্গে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। যে সিপিএম, কংগ্রেস, টিএমসি কখনও উদ্বাস্তুদের কথা কখনও ভাবেনি, আজ গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে সকলকে।
• অমিত শাহ আসায় দুর্গাপুজোর আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।
সব্যসাচী দত্ত বলেন—
• বাংলা ধীরে ধীরে পাকিস্তানে পরিণত হচ্ছে। তা হওয়া থেকে বাংলাকে আপনি বাঁচান অমিতজি।
• বাইরের লোক ছুরি মারলে বোঝা যায়, কিন্তু পাশের লোক ছুরি মারলে বোঝা সম্ভব হয় না।
• আমরা আবদুল কালামকে শ্রদ্ধা করি, আজমল কাসভকে নয়।
• মুকুলদা আমার বাড়িতে লুচি-আলুরদম খেয়েছিলেন বলে, অনেক কথা হয়েছিল। কিন্তু বাংলার মানুষ আতিথেয়তা দেখাতে ভোলেন না।
• আমেরিকা, রাশিয়া, চীনকে এক সূত্রে বেঁধে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ।
• আমার কাছে আগে দেশ, পরে দল, তার পর ব্যক্তি।
অমিত শাহের সঙ্গে সব্যসাচী দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।
অমিত শাহের উপস্থিতিতে বিধাননগরের প্রাক্তন বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে বিজেপিতে স্বাগত জানালেন দিলীপ ঘোষ।
• মঞ্চে পৌঁছলেন অমিত শাহ।
মুকুল রায় বলেন—
• পৃথিবীর সব দেশে ন্যাশনাল সিটিজেন্স রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।
• মতুয়ারা শরণর্থী। কিন্তু খাগড়াগড় কাণ্ডের জঙ্গিরা অনুপ্রবেশকারী।
• যে দিন পূর্ব পাকিস্তান তৈরি হল, সে দিন সেখানে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৩০ লক্ষ। আজ তা ৮ লক্ষে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
• এনআরসি কী? শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারীর সংজ্ঞা জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
• এখন বাংলায় এনআরসি হতে দেবে না বলে নতুন গোঁ ধরেছে।
• আজও ৩৭০ নিয়ে স্পষ্ট কথা বলতে পারছে না তৃণমূল-কংগ্রেস।
• কিন্তু শেষ মুহূর্তে এমন অবস্থা হল যে ভোটে অংশ না নিয়ে ওয়াকআউট করতে হল সংসদ থেকে।
• তৃণমূলের করুণ অবস্থাটা নিজের চোখে দেখেছি আমি। ৩৭০ ধারা বিলোপ হতে দেবেন না বলে বলে জানিয়েছিলেন।
• এত দিন কাশ্মীরকে লুটে খেয়েছেন বেশ কিছু নেতারা। ভারতবর্ষকে লুটে খেয়েছেন।
• মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজও ৩৭০ ধারা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারছেন না।
• আজ সব্যাসাচী দত্ত এসেছেন বিজেপিতে যোগ দিতে।
• তৃণমূল বিধায়করা লাইন দিয়ে এগিয়ে আসছেন বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে।
• এত দিন বিজেপির কর্মীরা একটু ভয়ই পেতেন তৃণমূলকে, কিন্তু আজ কেই ভয় পান না। বরং প্রত্যেকের মুখে একই কথা, ‘লড়কে লেঙ্গে।’
• শুধুমাত্র মিথ্যা বলে, অপপ্রচার করে, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।
• আগামী নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৬০-এর গণ্ডি পেরোতে পারবে না।
• বক্তৃতা করলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক মোহিত রায় এবং মুকুল রায়।