গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
আমেরিকার গাড়ি উৎপাদনকারী সংস্থা টেসলাকে বাংলায় বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। তা নিয়ে প্রকাশ্যেই তাঁকে কটাক্ষ করলেন বিজেপি-র বাংলার সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। তাঁর প্রশ্ন, টেসলার প্রধানের কাছে বাংলায় ব্যবসা করার কোন সুবিধাটি কথা তুলে ধরবেন মন্ত্রী। তিনি কি সিঙ্গুরের উদাহরণ দেবেন? নাকি বাংলায় ‘ভোটের সময় বা ভোটপরবর্তী হিংসা’-র বিবরণ পেশ করবেন? একটি টুইট করে অমিত জানতে চেয়েছেন, ঠিক কী ভাবে বাংলাকে আমেরিকার ব্যবসায়ীর কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে চান রাজ্যের মন্ত্রী!
সম্প্রতিই আমেরিকার ধনকুবের এবং টেসলার প্রধান এলন মাস্ক একটি টুইট করে জানিয়েছিলেন, ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে তাঁর কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে তিনি আশা করছেন ওই সমস্যা দ্রুত মিটবে। এর পরই টেসলাকে বাংলায় এসে ব্যবসা করার আমন্ত্রণ জানান, রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহম্মদ গোলাম রব্বানি। এলনের টুইটটি উদ্ধৃত করে গোলাম লেখেন, ‘‘বাংলায় আসুন। পশ্চিমবঙ্গে যেকোনও শিল্পের জন্য সেরা পরিকাঠামো রয়েছে। আর আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শিতাও রয়েছে।’’ আমেরিকার ধনকুবেরকে ওই টুইটে বাংলায় ব্যবসা করার সুবিধা বোঝাতে মন্ত্রী লেখেন, ‘‘বেঙ্গল মিনস বিজনেস।’’ যার সারকথা হল—বাংলা কাজের কথা বলতেই পছন্দ করে। গোলামের ওই টুইটটিকেই কটাক্ষ করেছেন অমিত। এ ব্যাপারে সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ির প্রকল্পের প্রসঙ্গেও প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত করেছেন তিনি। যদিও অমিতের ওই টুইটের জবাবে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘এলন মাস্ক বিশ্বের অন্যতম বড় একজন শিল্পপতি। ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য তিনি বিখ্যাত। তিনি যদি বাংলায় বিনিয়োগে আগ্রহী হন, তাতে রাজ্যের মঙ্গল হবে। এ নিয়ে অমিত কী বলছেন, তাতে গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ হয় না।’’
ভারতে ব্যবসা বিস্তার করার কথা দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছে আমেরিকার ইলকট্রিক গাড়ি উৎপাদনকারী সংস্থা টেসলা। এমনকি ভারতের বাজারের কথা মাথায় রেখেই স্বল্পদামে ইলকট্রিক গাড়ির একটি মডেল তৈরি করেছে তারা। কিন্তু ভারত সরকার ওই গাড়ির উপর প্রায় ১০০ শতাংশ আমদানি কর বসানোয় টেসলার ভারতে ব্যবসা করার পরিকল্পনা মাঝপথে বন্ধ রাখতে হয়েছে। এদিকে, বিদেশি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা মার্সিডিজ ইতিমধ্যেই ভারতের বাজারে তাদের ইলেকট্রিক গাড়ি আনার ঘোষণা করে দিয়েছে। ভারতের বাজারে টেসলার গাড়ি কবে আসছে সে সংক্রান্ত একটি টুইটের জবাবে এলন জানিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যায় পড়ছেন তিনি। তবে এলনের ওই টুইটের প্রতিক্রিয়ায় শুধু বাংলা নয় ভারতের আরও দুই রাজ্য থেকে প্রস্তাব এসেছে।
ইতিমধ্যেই তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে টেসলাকে। এমনকি এলনকে মহারাষ্ট্রে গাড়ি উৎপাদনের কারখানা খোলারও প্রস্তাবও দিয়েছে মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরের সরকার। অন্যদিকে, তেলঙ্গানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতে আমেরিকার সংস্থাটির বিপণন কেন্দ্র খোলার ব্যাপারে সবরকম সহযোগিতা করার। তৃতীয় প্রস্তাবটি আসে বাংলার তরফে। তবে বাংলায় বিদেশি গাড়ির সংস্থাকে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বিজেপি পুরনো টাটার ন্যানো গাড়ি প্রকল্পের ইঙ্গিত টেনে এনেছে। বিজেপি নেতা অমিত জানতে চেয়েছেন বাংলাই শিল্পের শ্রেষ্ঠ জায়গা এটা বোঝাতে কি সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো প্রকল্পের উদাহরণ দেবে রাজ্য?