লন্ডভন্ড মইনুল মণ্ডলের ঘর। জলঙ্গির মধুবোনা গ্রামে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
কমবেশি বিশ বছর আগে খাদিম-কর্তা পার্থ রায়বর্মণের মুক্তিপণ বাবদ আফতাব আনসারিরা যে-টাকা পেয়েছিল, তার একাংশ আল-কায়দার ঘরেও উঠেছিল বলে গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা। অনুমাননির্ভর সেটুকু যোগ ছাড়া বাংলার সঙ্গে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পর্কের প্রমাণ এত দিন মেলেনি। ভূ-ভারতে আল-কায়দার অস্তিত্ব ছিল শুধু কাশ্মীর ঘিরেই। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদে মদত দেওয়াই ছিল তাদের মূল কাজ। কিন্তু এখন বঙ্গ ও কেরলে আল-কায়দার সুস্পষ্ট উপস্থিতি গোয়েন্দাদের বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গে কপালের ভাঁজও বাড়াচ্ছে।
বঙ্গে বড়সড় জঙ্গি কার্যকলাপের ঘটনা খুব বেশি নেই। এর মূল কারণ, পশ্চিমবঙ্গকে জঙ্গিরা চিরকালই দু’ভাবে ব্যবহার করেছে বলে গোয়েন্দাদের অভিমত। ১) এই রাজ্য দিয়ে তারা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করেছে। লুকিয়ে ভারতে ঢোকার জন্য বাংলাদেশ সীমান্তের থেকে সহজ পথ তাদের কাছে কখনওই ছিল না বলে জানান গোয়েন্দা-কর্তারা। ২) শুধু যাতায়াত নয়, লুকিয়ে থাকার জন্যও উত্তর আর দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা অনায়াসে ব্যবহার করেছে তারা।
২০০১ সালে খাদিম-কর্তার অপহরণই কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপের প্রথম বড় ঘটনা। তার অনেক আগে, ১৯৯৩ সালে বৌবাজার বিস্ফোরণ এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে শিয়ালদহে বিস্ফোরণের উদাহরণ থাকলেও পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট জঙ্গি কার্যকলাপের শুরু ২০০১-এই। কিন্তু তাতে আল-কায়দার হাত ছিল না। এই অপহরণে মূল অভিযুক্ত আফতাব ছিল হরকুতুল জেহাদি গোষ্ঠীর সদস্য। তারা তখন নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে উঠে এসেছে। তার পরিচালনায় ছিল কলকাতারই যুবক আসিফ রেজা খান। পুলিশি সূত্রের খবর, অপহরণ করে খাদিম-কর্তাকে রাখা হয় উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার একটি ডেরায়। মুক্তিপণ পেয়ে ছাড়া হয় তাঁকে।
এ-পর্যন্ত বাংলায় সব চেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে আমেরিকান সেন্টারের সামনে। তার পিছনেও সেই আফতাব। তবে সেই হামলা চালানো হয়েছিল মূলত বদলা নেওয়ার জন্য। কলকাতায় আসিফ ধরা পড়েছিল সিআইডি-র হাতে। তাকে তুলে নিয়ে যায় দিল্লির পুলিশ। গুজরাতে ২০০১ সালের ডিসেম্বরে এনকাউন্টারে মারা যায় সে। তার বদলা নিতে আসিফের ভাই আমির রেজা ২০০২ সালে কলকাতায় এসে সিআইডি-র সদর দফতর ভবানী ভবনের সামনে হামলার ছক কষে। কিন্তু সেই ছক বানচাল হয়ে যায়। মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে পাহারারত কলকাতা পুলিশের পাঁচ জনকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়ে চলে যায় আফতাবেরা। সেই বছরেই দুবাইয়ে ধরা পড়ে আফতাব। কলকাতার জেলে আছে সে। আমির অধরা।
২০১৪-য় বর্ধমানে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ এ-পর্যন্ত বাংলায় জঙ্গি তৎপরতার শেষ বড় ঘটনা। তার সঙ্গেও আল-কায়দার কোনও সংস্রব ছিল না। সেটা ছিল জামাত-উল-মুজাহিদিনের কাজ। ওই বাংলাদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী সেখানে বিস্ফোরক বানাচ্ছিল এবং তা সরবরাহ করছিল বাংলাদেশে। দেড় বছর ধরে এই কার্যকলাপের কথা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি এই রাজ্যের গোয়েন্দারা। সেখানে ভুলবশত বিস্ফোরণের পরে হইচই শুরু হয়। রাজ্য জুড়ে তল্লাশি অভিযানে তখন বহু জামাত জঙ্গি ধরা পড়ে। ২০১৮ সালে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বুদ্ধগয়ায়। তদন্তে জানা যায়, সেটা ছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ। এ রাজ্যের ফরাক্কায় বসে ওই বিস্ফোরণের ছক কষেছিল তারা।
আরও পড়ুন: ‘পড়াশোনা নিয়ে কথা হত দুই বন্ধুর’
আরও পড়ুন: ডার্ক ওয়েবে বিনিময় বার্তা, চাঁই পাকিস্তানে