অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
আবার অধীর চৌধুরীতেই কি আস্থা রাখতে চলেছে এআইসিসি? কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ থেকে তেমনই ইঙ্গিত পাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের একাংশ। গত সপ্তাহে রাহুল গান্ধী সাক্ষাৎ করেছেন অধীরের সঙ্গে। তার পরেই প্রদেশ কংগ্রেসে অধীরের বিরোধী শিবিরের নেতারা যোগাযোগ করেন এআইসিসি নেতাদের সঙ্গে। তাঁরা সরাসরি জানতে চান, অধীরকেই কি সভাপতি পথে রেখে দেওয়া হচ্ছে? শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তেমনই সঙ্কেত মিলেছে বলে ওই নেতাদের দাবি।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং রাহুল সব রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন। সেই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ডাকা হয়েছে বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীরকে। এই পদক্ষেপ থেকেও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত মিলছে বলে দাবি প্রদেশ নেতাদের একাংশের।
মঙ্গলবার দিল্লিতে বৈঠকের পর কলকাতায় ফেরার কথা অধীরের। বুধবার বিধান ভবনে তাঁর একটি সাংবাদিক বৈঠক হবে বলেও জানানো হয়েছে। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, শীর্ষ নেতৃত্বের ‘সবুজ সঙ্কেত’ পেয়েই বুধবার প্রদেশ সভাপতি পদে নতুন ইনিংস শুরু করবেন অধীর। উল্লেখ্য, জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে দিল্লিতে বাংলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরকে ‘প্রাক্তন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মির। তাঁর ওই ঘোষণার পরেই অধীর শিবিরের নেতারা মনে করতে শুরু করেন যে বিধান ভবনে অধীর জমানার অবসান হতে চলেছে। যদিও মিরের ওই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরে ক্ষোভের সুরে অধীর বলেছিলেন, কী ভাবে তিনি ‘প্রাক্তন’ হয়ে গেলেন, তা নিজেই বুঝতে পারছেন না! বাংলার মাঠে-ময়দানে দলের হয়ে যাঁদের দেখা যায়, তাঁদের অনেককে কেন দিল্লির ওই বৈঠকে ডাকা হয়নি, সে প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি।
কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, রাহুল-অধীর বৈঠকের পর সমীকরণ বদলাতে শুরু করে। তার পরেই মঙ্গলবারের বৈঠকে ডাক পেয়েছেন অধীর। বহরমপুরের পাঁচ বছরের সাংসদ অধীর এ বার ভোটে হেরেছেন। গত লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাকে হার মানতে হয়েছে রাজনীতিতে আনকোরা প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার তৃণমূলের ইউসুফ পাঠানের কাছে। কিন্তু একটি সূত্রের দাবি, অধীরের মতো ‘অভিজ্ঞ’ নেতাকে বাংলার রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চান রাহুল। একান্ত বৈঠকে অধীরকে বাংলার কংগ্রেস সংগঠন ঢেলে সাজিয়ে ময়দানে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে অধীরকে সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হলেও তাঁর বিরোধী শিবিরের নেতাদের এ বার সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার বিষয় ভাবনাচিন্তা করছে এআইসিসি। ‘সভাপতি’ অধীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দলের প্রবীণ তথা অন্য শিবিরের নেতাদের নিয়ে চলতে পারেন না। তাই অধীরকে সভাপতি পদে রেখে দেওয়ার সঙ্গে কয়েক জন কার্যকরী সভাপতিকেও যুক্ত করে দেওয়া হতে পারে। কয়েক জন নেতাকে এআইসিসির সংগঠনেও জায়গা দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তাতে ‘ভারসাম্য’ রক্ষিত হবে। তবে এ সবই এখনও পর্যন্ত ‘জল্পনা’। এআইসিসি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না করলে বা বিবৃতি না দিলে তা ‘চূড়ান্ত’ হবে না।
এআইসিসির এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সংগঠনের বেহাল দশার কথা এআইসিসি অজানা নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলায় অধীর চৌধুরীর মতো বিকল্প নেতাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার তাঁর বিরোধী শিবিরের নেতাদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। এই দুইয়ের ভারসাম্য করেই নতুন রাজ্য কমিটি গঠন করা হবে। যেখানে গুরুত্ব পাবেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতারাও। সঙ্গে আগামী প্রজন্মকেও তুলে আনতে নির্দেশ দেওয়া হবে সভাপতিকে।"