Sandeshkhali Incident

সে বারও অভিযোগ ছিল অত্যাচারের! আট দশক আগে তেভাগা আন্দোলনেরও ‘মুখ’ ছিল বেড়মজুর

আন্দোলন থেকে সরছেন না গ্রামবাসী। এক বৃদ্ধের কণ্ঠে প্রত্যয়, “তেভাগার স্মৃতি রয়েছে এই গ্রামের মাটিতে। তা-ও লুট হয়েছে। একজোট হয়ে প্রতিবাদ করলে কী হয়, তা এ গ্রামের মানুষ জানেন।”

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সময়ের ব্যবধান ৭৮ বছরের। ‘অত্যাচারের’ ছবিটা প্রায় একই রকম!

Advertisement

১৯৪৬ সাল থেকে সন্দেশখালির বেড়মজুরে ‘তেভাগার লড়াই’ দেখেছিলেন সেখানকার মানুষজন। ২০২৪-এ শেখ শাহজাহান ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধেও এমনই আন্দোলনে নেমেছেন ওই বেড়মজুরের বাসিন্দারাই। এখানেও অভিযোগ শোষণ, অত্যাচার, দাদাগিরির। এমনকি, তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী গ্রামের শহিদ বেদি আর উদ্যানও লুট করার অভিযোগে ক’দিন ধরে তপ্ত ওই গ্রাম।

শাহজাহান-সহ কয়েক জন অভিযুক্ত এখনও ধরা পড়েনি। কিন্তু আন্দোলন থেকে সরছেন না গ্রামবাসী। এক বৃদ্ধের কণ্ঠে প্রত্যয়, “তেভাগার স্মৃতি রয়েছে এই গ্রামের মাটিতে। তা-ও লুট হয়েছে। একজোট হয়ে প্রতিবাদ করলে কী হয়, তা এ গ্রামের মানুষ জানেন।”

Advertisement

তেভাগা আন্দোলন শুরুর এক বছর পরে, ১৯৪৭ সালের ৮ মার্চ স্থানীয় জোতদার দেবেন্দ্রনাথ সর্দারের কাছারি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন কৃষকসভার সদস্যেরা। দেবেন্দ্রনাথের লেঠেল বাহিনী এবং পুলিশের গুলিতে বহু মানুষের রক্ত ঝরে। কৃষক নেতা হেমন্ত ঘোষালের নেতৃত্বে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন চামু বিশাল, রতিরাম সর্দার, থুপা সর্দার, পারুল সর্দার, বাতাসি সর্দাররা। প্রাণ হারান অনেকে। কৃষক পরিবারগুলি থেকে একজন যুবক, একটা লাঠি আর এক টাকা করে নিয়ে কৃষক বাহিনী গড়ে ১৯৪৬-এর তেভাগা আন্দোলনের বীজ সন্দেশখালিতে ছড়িয়েছিলেন হেমন্তরাই। সে কথা রয়েছে তাঁর লেখাতেও।

জমির দু’ভাগের ফসল কৃষকের, এক ভাগ মালিকের— এই দাবিতে অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও এ পারে উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে প্রথম তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। হেমন্ত ঘোষালের নেতৃত্বে সেই আন্দোলনই সুন্দরবনের দ্বীপ এলাকায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তখনই অগ্নিগর্ভ হয় বেড়মজুর।

সে কালের জোতদার দেবেন্দ্রনাথের কাছারি বাড়ির মতোই বেড়মজুরের কাছারি গ্রামে তৃণমূল নেতা অজিত মাইতির আলাঘরে দু’দিন আগে আগুন ধরিয়ে দেয় গ্রামবাসীরা। ৭৮ বছর আগের স্মৃতি ঝাপসা বেড়মজুরের নিতাই সর্দারের। বৃদ্ধ বলেন, “তেভাগার লড়াই জমিদার-জোতদারদের বিরুদ্ধে প্রথম কৃষককে মাথা তুলে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিল। আজও জমি-হাঙরদের বিরুদ্ধে সেই লড়াইটাই লড়ছেন এখানকার মানুষ।”

শাহজাহান, সিরাজউদ্দিন, শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারদের মতো কিছু নেতার প্রতি এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। ধৃত অজিত মাইতির বাড়ি তেভাগার শহিদ বেদির পাশেই। তাঁর বাড়িতেও গ্রামবাসীরা চড়াও হয়। তেভাগার স্মৃতিতে গড়ে তোলা উদ্যান শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিন তার স্ত্রী’র নামে করে নিয়েছে বলেও এলাকাবাসীর দাবি। সন্দেশখালির পুকুরপাড়ায় একটা আস্ত খাল, সরকারি খাস জমি দখল করে শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারেরা বিক্রিও করে দিয়েছে বলে অভিযোগ।

এত দিন কেন প্রতিবাদ হয়নি? বৃদ্ধ নিতাই বলেন, “অর্থ এবং ক্ষমতার কাছে তেভাগায় প্রতিবাদের পরিণতি প্রথম দিকে কী হয়েছি, তা গ্রামবাসী জানেন। তাই কিছুটা ভয় ছিল।”

তেভাগা আন্দোলনেও মহিলারা বাহিনী গড়েছিলেন সামনের সারিতে থাকা পুরুষদের সাহায্য করার জন্য। এখন সিরাজউদ্দিনদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন সন্দেশখালি, বেড়মজুরের মহিলা বাহিনী। মহিলারাই এ বার আন্দোলনের প্রথম সারিতে। তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তাঁরাই। তেভাগা আন্দোলন নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও লাঠি-ঝাঁটা হাতে পথে নামা দুর্গা, জয়া, শঙ্করী সর্দারেরা বলছেন, “সিরাজউদ্দিনদের কথা না শুনলে মান-সম্ভ্রমটুকুও রাখার উপায়ও ছিল ন। জমি দূর অস্ত।”

তাই তেভাগার মতোই এখন ফের একজোট বেড়মজুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement