(বাঁ দিক থেকে) অঙ্কিতা অধিকারী, ববিতা সরকারের পর চাকরি গেল অনামিকা রায়েরও। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এসএসসি নিয়োগ মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষা দফতরের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। সেই চাকরি পেয়েছিলেন ববিতা সরকার। কিন্তু ববিতার চাকরিও স্থায়ী হয়নি। তাঁর চাকরি পেয়েছিলেন অনামিকা রায়। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের পর সেই অনামিকার চাকরিও বাতিল হল। উচ্চ আদালতের রায়ের পর অনামিকা বলেন, ‘‘রায় শুনে ভীষণ হতাশ। অযোগ্যদের জন্য এ ভাবে আবার পরীক্ষা দিতে হবে, এটা ভেবে হতাশ লাগছে। অনেক আইনি লড়াই লড়ে, অনেক যুদ্ধের পর এই চাকরি পেয়েছিলাম।’’
সোমবার হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বার রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ এসএসসি মামলার রায়ে সব মিলিয়ে মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করেছে। অর্থাৎ, ২০১৬ সালে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের সকলের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, জনগণের টাকা থেকে বেতন নিয়েছেন, তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। বছরে ১২ শতাংশ সুদে টাকা ফেরত দিতে হবে। এই রায়ের পরেই ভেঙে পড়েছেন বলে জানালেন অনামিকা। তিনি বলেন, ‘‘এই রায় মেনে নিতে পারছি না। শুধু অযোগ্যদের বার করে দিতে পারত। গোটা প্যানেল বাতিল করে দেওয়ার কোনও মানে হয় না।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মন্ত্রীকন্যা অঙ্কিতার নাম আদালতে প্রথম ওঠে ২০২২ সালের ১৭ মে। অভিযোগ ওঠে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা পদে তাঁর নিয়োগ বেআইনি। এর পরেই অঙ্কিতা এবং তাঁর পিতা পরেশকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেন প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতো কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা পরেশ এবং অঙ্কিতা কলকাতায় আসার জন্য ট্রেনেও চেপেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কলকাতায় পৌঁছননি ওই দিন। ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিলেন! পরে জানা যায়, তাঁরা বর্ধমানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য দু’জনকেই সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। পরে ওই বছর ২০ মে চাকরি যায় অঙ্কিতার। সেই চাকরি পান ববিতা। নিয়োগ মামলায় নাম জড়ানোর পর পরেশকেও মন্ত্রিপদ থেকে সরানো হয়।
অঙ্কিতার নিয়োগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন ববিতাই। সেই মামলায় জিতে অঙ্কিতার চাকরি এবং তাঁর বেতন বাবদ পাওয়া ১৪ লাখ টাকা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ববিতার চাকরিও স্থায়ী হয়নি। তাঁরও চাকরি যায় ২০২৩ সালের ১৬ মে। সেই চাকরি পান অনামিকা। ববিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, আবেদনপত্রে নিজের নম্বর বেশি দেখিয়েছিলেন তিনি। ববিতার নিয়োগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন অনামিকা। পরে সেই মামলায় ববিতার চাকরি এবং অঙ্কিতার থেকে পাওয়া সেই ১৪ লাখ টাকাও অনামিকা পেয়েছিলেন। সোমবার সেই চাকরি খোয়ালেন অনামিকাও।
অনামিক বলেন, ‘‘অযোগ্যদের জন্য যে যোগ্যদের বিপদে ফেলা হবে, এটা আশা করিনি। ব্যাপক দুর্নীতির কারণে এটা হল। এত কিছুর পর যে শেষে এই রায় আসবে, এটা ভাবিনি।’’