বাইরনের মতো তিনিও বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে ভাঙড় থেকে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছেন। —ফাইল চিত্র।
জয়ের তিন মাসের মধ্যেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বাইরন বিশ্বাস। সোমবার ঘাটালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে জোড়াফুলের পতাকা নিয়ে দলবদল করেছেন সাগরদিঘির কংগ্রেস বিধায়ক। তার পরেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যের আর এক বাম-কংগ্রেস সমর্থিত বিধায়ককে নিয়ে। তিনি ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা নওশাদ সিদ্দিকি। বাইরনের মতো তিনিও বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে ভাঙড় থেকে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছেন।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন নওশাদ। ভাঙড়ে তৃণমূল তথা তাদের ‘ডাকাবুকো’ নেতা আরাবুল ইসলামের একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙে জিতেছিলেন নওশাদ। তার পর থেকেই বিধানসভায় নিজের মতো করে বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ (আইএসএফ)-এর কথা তুলে ধরেন তিনি। আইএসএফের একাধিক সূত্রের দাবি, জেতার পর থেকে বহু বার নওশাদের কাছে তৃণমূলে যোগদানের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু কোনও বারই সায় দেননি তিনি। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে কখনও সে কথা মেনে নেননি। বরং ভাঙড় বিধানসভা ‘পুনরুদ্ধার’ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লাকে। নওশাদের অবশ্য বক্তব্য, শাসকদলের এমন সব ‘কৌশল’-এর মোকাবিলা করেই তিনি ভাঙড়ের বিধায়ক হিসাবে নিজের কাজ করেন। প্রসঙ্গত, সোমবারেই আরাবুল নওশাদ সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘পুলিশ না-থাকলে ওঁর পিঠের চামড়া থাকত না!’’ যা শুনে আইএসএফের বিধায়ক হালকা চালে বলেছেন, ‘‘শুনেছি ওঁর শুগার আছে। ভাল করে ডাক্তার দেখানো উচিত।’’
তবে সোমবার বাইরনের দলবদলের পর আবার নওশাদকে নিয়ে আলোচনা এবং জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনিও কি তৃণমূলে যোগ দেবেন? মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন করায় নওশাদ প্রথমে শুধু বলেন, ‘‘তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না!’’ তার পরে নিজের বক্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নবীনতম সদস্য। তাঁর কথায়, ‘‘ভাঙড়ের মানুষের কাছে আমি একজন বিরোধী বিধায়ক। সেই হিসাবেই নির্বাচিত হয়েছি। তাই তাঁদের মতামতকে মর্যাদা দিয়েই আমি বিধানসভায় নিজের দায়িত্ব পালন করি। ভাঙড়ে মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে আমাকে জিতিয়েছিলেন। তাই জনতার সেই জনাদেশ নিয়েই আমাকে চলতে হবে। তাঁদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে পারব না।’’ বাইরনের দলবদলের পর তাঁকে আরও অনেকে এমন প্রশ্ন করেছেন। সকলকেই নওশাদ বলেছেন, পদবি ‘বিশ্বাস’ হলেই মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়া যায় না। তাঁর অবস্থান যা ছিল তাই থাকবে। তিনি মানুষের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করতে পারবেন না।
দেখা গিয়েছে, বাইরনের দলবদলের ঘটনার পরে সোমবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ‘ডিসপ্লে পিকচার’ বদল করেছেন নওশাদ। সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর...।’’ তৃণমূল এবং বিজেপির সঙ্গে ‘সমদূরত্ব’ বজায় রেখে পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে লড়াই করতে চান নওশাদ। তাই বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণের কোনও কথা তাঁর মাথায় নেই বলেই সাফ জানিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক। ঘটনাচক্রে, গত জানুয়ারি মাসে দলের প্রতিষ্ঠাদিবসের কর্মসূচিতে ধর্মতলায় পুলিশের সঙ্গে আইএসএফ কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার পরে নওশাদকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। দীর্ঘ ৪০ দিন পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। কাকতালীয় ভাবে, যে দিন নওশাদ জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান, সেই দিনই সাগরদিঘির উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন বাইরন।