ছবি পিটইআই।
আমপান তাণ্ডবের পরে তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন চলছে সাহায্য দেওয়ার পালা। আর গরমিলের অভিযোগ সেখানেই। বেশির ভাগ অভিযোগই ঘর বিলিতে স্বজনপোষণের। হচ্ছে বিক্ষোভও।
উত্তর ২৪ পরগনার শুধু বাগদা ব্লকে হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি নিয়ে ব্লকের বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাসীরা আপত্তি তোলেন। তাঁদের দাবি, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের নাম তালিকায় নেই। উল্টে ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন মানুষের নাম রয়েছে। বিডিও জ্যোতিপ্রকাশ হালদার সোমবার নতুন তালিকার নির্দেশ দেন। বুধবারই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দেখতে চেয়ে রনঘাট পঞ্চায়েতে তালা দিয়ে, পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী। বাগদার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য পরিতোষ সাহা বলেন, ‘‘পুরনো তালিকায় কমবেশি সব পঞ্চায়েত থেকেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের থেকে বেশি নাম ঢুকে পড়েছিল।’’ অল্প সময়ে তালিকা তৈরি করতে গিয়ে ভুলভ্রান্তির কথা বলছেন কোনও কোনও পঞ্চায়েত প্রধান।
ক্ষতিপূরণের তালিকা তৈরিতে নানা জায়গায় তৃণমূলের পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠায় ক্ষেত্র বিশেষে সাহায্য প্রদান সাময়িক স্থগিত রাখছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। দিন দুই আগে পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান অজিতকুমার সামন্তের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের তালিকা তৈরিতে স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে। জানা যাচ্ছে, সভা ডেকে লিখিত ‘রেজোলিউশন’ নিয়ে ‘প্রধান কোটা’য় কয়েক জনের নাম ঢোকানের কথা বলা হয়েছিল। পরে তালিকা বাতিল করেন বিডিও। বৃহস্পতিবার আবার কোলাঘাটের খন্যাডিহি পঞ্চায়েতের প্রধান সুপ্রিয়া জানার বিরুদ্ধেও স্বজনপোষণের অভিযোগে বিক্ষোভ হয়। সুপ্রিয়ার দাবি, ‘‘স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের মাধ্যমে প্রকৃত দাবিদারদেরই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা সদর তমলুকে আবার ত্রিপল বিলি নিয়ে শাসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ জানান, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন না।
আমপানে ঘরহারাদের ক্ষতিপূরণকে কেন্দ্র করে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ নদিয়াতেও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানেরা। ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা জেলার বহু অঞ্চলে পঞ্চায়েত কর্তা বা সদস্যের ঘনিষ্ঠদের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে বা যাঁদের বাড়ির ক্ষতি হয়নি, তাঁরা সাহায্য পেয়েছেন বলে অভিযোগ। এ দিনও এই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত ভালুকা পঞ্চায়েতে, কাষ্ঠডাঙা-২ পঞ্চায়েতে ও স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে হাওড়ার সাঁকরাইলেও। জেলার মন্ত্রী অরূপ রায় অভিযোগ নিয়ে জেলাশাসককে তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন।