By Election 2024

জোটরক্ষায় এআইসিসি-র বার্তা, কথা অধীর-বিমানের

সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বিধায়কেরা লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের পাঁচ জেলার ৬ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। তার মনোনয়ন প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪১
Share:

(বাঁ দিকে) বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

প্রথম দিকে দু’পক্ষই ছিল যোগাযোগে ‘নিষ্ক্রিয়’। শেষ মুহূর্তে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে বার্তা গেলেও বাম শরিক দলের আপত্তিতে কাজ হয়নি। রাজ্যে আসন্ন উপনির্বাচনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে বামফ্রন্ট। তার পরেও ভবিষ্যতের পরিস্থিতি এবং ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সমীকরণ মাথায় রেখে বাংলায় বামেদের সঙ্গে জোটরক্ষায় উদ্যোগী হল এআইসিসি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তা পেয়ে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী কথা বললেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে। সেই আলোচনায় অবশ্য সমঝোতার প্রশ্নে আশু সমাধান বেরোয়নি। তবে রাজ্যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে তাঁরা যে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া রেখেই এগোতে চান, বিমানবাবু সেই মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বিধায়কেরা লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের পাঁচ জেলার ৬ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। তার মনোনয়ন প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ওই ৬ আসনের মধ্যে কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রে লড়াই করেছিল কংগ্রেস। বামেরা লড়েছিল চারটিতে, একটি ছাড়া হয়েছিল আইএসএফ-কে। এ বারও সেই সূত্র মেনেই সিতাই আসন কংগ্রেসের জন্য ছাড়া যায় কি না, বামফ্রন্টের বৈঠকে সোমবার সেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিমানবাবু। কিন্তু বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক সিতাইয়ে প্রার্থী দিতে অনড় মনোভাব নিয়েছিল। বৈঠকের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বিমানবাবু বাম প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, রাতেই এআইসিসি ফের এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়। গত বিধানসভা ভোটের রফা-সূত্র অনুযায়ী এই উপনির্বাচনেও সমঝোতা সম্ভব কি না, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরকে সেই বিষয়ে বাম নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল।

গোড়া থেকে এ বারের সমঝোতা প্রক্রিয়ার মধ্যে অধীর ছিলেন না। তিনি এআইসিসি-কে জানান, বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বই এই ব্যাপারে যা বলার, বলতে পারবেন। কিন্তু বেণুগোপাল তাঁকে অনুরোধ করেন অধীর যাতে তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আলোচনায় উদ্যোগী হন। এর পরে মঙ্গলবার সকালে দিল্লি থেকেই অধীর কথা বলেছেন বিমানবাবুর সঙ্গে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তাঁকেও বলেছেন, কংগ্রেসের বার্তা আসতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। তত ক্ষণে বাম শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের প্রক্রিয়া থেকে আর পিছোনোর উপায় ছিল না। তবে ভবিষ্যতের জন্য তাঁরা অবশ্যই দরজা খুলে রাখতে চান। পরে প্রশ্ন করা হলে এই বিষয়ে অধীর বলেছেন, ‘‘এআইসিসি-র কথায় আমি বিমানবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। এখন ওঁদের আর কিছু করার নেই, সেটাই উনি বলেছেন। তবে একটা উপনির্বাচনই শেষ কথা নয়।’’ প্রসঙ্গত, আগের দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে যোগাযোগ করে অন্তত একটি বা দু’টি আসনে বোঝাপড়া করা যায় কি না, সেই বার্তা দিয়েছিলেন।

Advertisement

উপনির্বাচনে সমঝোতা না-হওয়ার পরে দুই শিবিরেই কিছু প্রশ্ন উঠছে। এআইসিসি-র বার্তায় ইঙ্গিত মিলছে, তারা বাংলায় রাজনৈতিক সমীকরণে কোনও বদলের কথা ভাবেনি। তা হলে এআইসিসি-র মনোভাব না-বুঝেই কি কংগ্রেস একক লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে এগিয়ে গেল এবং শেষ মুহূর্তে বামেদের সঙ্গে যোগাযোগ করল, সেই প্রশ্ন তুলছে দলেরই একাংশ। আবার সিপিএমের অন্দরে প্রশ্ন উঠছঠে, বামেরাই বা কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও চেষ্টাই করল না কেন!

তবে লোকসভা নির্বাচনে সমঝোতা ভেঙে গেলেও এই উপনির্বাচনে ফের বামেদের হাত ধরছে আইএসএফ। উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া কেন্দ্রে তাদের প্রার্থী আইনজীবী পিয়ারুল ইসলাম। বামেদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইএসএফের চেয়ারম্যান, বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর বক্তব্য, তাঁরা মাদারিহাট ও তালড্যাংরা আসনেও প্রার্থী দিতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ওই আসনগুলিতে বামফ্রন্ট লড়াই করবে। বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মোকাবিলার ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ আইএসএফ একটি আসনেই লড়বে। এ বার নৈহাটি আসন সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনকে ছেড়েছে বামফ্রন্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement