CBI

CBI: রাজ্যে মামলার স্রোতে বেসামাল সিবিআই, সামাল দিতে দিল্লি থেকে এলেন কর্তা

শুক্রবার দিল্লি থেকে এসে সংস্থার আঞ্চলিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সিবিআইয়ের অতিরিক্ত অধিকর্তা অজয় ভাটনগর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২২ ০৬:৫৭
Share:

ফাইল ছবি

বাংলায় স্রোতের মতো আসছে মামলা। সিবিআইয়ের অন্দরে গুঞ্জন, সেই চাপে তদন্তকারী অফিসার ও আইনজীবীরা কিছুটা বেসামাল। এ অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শুক্রবার দিল্লি থেকে এসে সংস্থার আঞ্চলিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সিবিআইয়ের অতিরিক্ত অধিকর্তা অজয় ভাটনগর। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই সূত্রের খবর, সেটাই ছিল এ দিনের ওই আলোচনার মূল বিষয়। চাপের মুখে তদন্তকারী ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়ে ঘাটতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা যে তৈরি হচ্ছে, সিবিআই-কর্তাদের তরফে তা মেনে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বীরভূমে বগটুই-কাণ্ড, সেখানকার তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন, ঝালদায় তপন কান্দু খুন, নদিয়ার গণধর্ষণে নাবালিকার মৃত্যু, মালদহের কালিয়াচকের ধর্মান্তরণ, শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি— কয়েক মাসে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো একের পর এক মামলার তদন্তের দায়িত্ব এসে পড়েছে সিবিাইয়ের হাতে। নবতম সংযোজন, হেরিটেজ সংক্রান্ত অভিযোগে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও চিত্রশিল্পী তথা হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা।

এর মধ্যে দিল্লি থেকে কয়েক দফায় সিবিআইয়ের কয়েক জন অফিসার এসেছেন কলকাতায়। ডিএসপি ও সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদের বেশ কয়েক জন অফিসার পূর্বাঞ্চলীয় অফিসে যোগও দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও এত মামলার চাপে বেসামাল দফতর। মামলার সংখ্যার নিরিখে অফিসারের সংখ্যা খুব কম বলে গুঞ্জন চলছে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার অন্দরেই। একই অফিসারের কাঁধে একাধিক মামলার তদন্তভার এসে পড়ছে।

Advertisement

সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনা ঘটে যাওয়ার দিন পনেরো বা মাসখানেক পরে মামলা হস্তান্তর করা হচ্ছে। ফলে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে সময় লাগছে বেশি।’’ সংস্থার ডিআইজি-কে রামপুরহাটের তদন্তের ফাঁকেই কয়েক দিনের জন্য ঝালদা গিয়ে তদন্ত করতে হয়েছে। আবার আদালতের নির্দেশ পেয়ে কয়েক দিনের মধ্যে ওই অফিসারকেই ছুটতে হয়েছে নদিয়ায় নাবালিকার মৃত্যুর তদন্তে। একই ভাবে যিনি নদিয়ার মামলা দেখছেন, তিনিই কলকাতা ফিরে গরু পাচার কাণ্ডে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মামলা পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনও অফিসারকে আবার অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই সটান চলে যেতে হচ্ছে আসানসোলে বিকাশ মিশ্রের মামলায়।

সিবিআই অফিসারেরা এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি ব্যস্ত এসএসসি মামলা নিয়ে। জনমানসে এই মামলার প্রভাব অনেক বেশি। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই মামলার তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে চাইছে সিবিআই। সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, অধিকাংশ তদন্তই হচ্ছে হাই কোর্টের নজরদারিতে। তদন্তের
গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে উচ্চ আদালতকে নিয়মিত অবহিত করাতে হচ্ছে। অফিসারদের বক্তব্য, কার্যত নাওয়াখাওয়া ভুলে কাজ করে যেতে হচ্ছে তাঁদের।

সম্প্রতি তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে সংস্থার আইনজীবীদের সমন্বয়ের অভাবও চোখে পড়েছে। ভোট-পরবর্তী হিংসার একটি মামলায় নিম্ন আদালত থেকে কয়েক জন অভিযুক্তের জামিন খারিজের আবেদনের শুনানিতে বিচারপতির প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি সিবিআইয়ের আইনজীবী। ঝালদার কাউন্সিলর খুনের মামলার গতিহীন হয়ে পড়েছে বলে কোর্টে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। ওই মামলার শুনানিতে সিবিআই আইনজীবীরা তেমন সদুত্তর দিতে পারেননি।

তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তার স্বীকারোক্তি, ‘‘কিছুটা সমন্বয়ের অভাব থেকে যাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হল, এক-এক জন অফিসারের হাতে একাধিক মামলা এসে পড়া। তদন্তের গতিপ্রকৃতির বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে সময়ের অভাবে তদন্তকারী অফিসারেরা পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করতে পারছেন না। একসঙ্গে এত মামলা চালাতে অফিসার ও আইনজীবীর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement