নিশিকান্ত মণ্ডল খুনের ঘটনায় শুভেন্দু অধিকারীকে কাঠগড়ায় তুললেন আবু তাহের। —নিজস্ব চিত্র।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা তথা সোনাচূড়ার পঞ্চায়েত প্রধান নিশিকান্ত মণ্ডলকে খুনের চক্রীদের নাম জানেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এবং সব জেনেশুনেই অপরাধীদের আড়াল করছেন তিনি। শনিবার নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় একটি স্মরণসভায় এমন দাবি করলেন একদা শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ তথা নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা আবু তাহের। ওই খুনের ঘটনার ১২ বছরেরও বেশি সময় পরে সোনাচূড়ার প্রকাশ্য সভায় তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য, নিশিকান্তকে ঠেকাতেই তাঁকে খুন করা হয়েছিল। তবে এত দিন পর কেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তাহেরের, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। এই অভিযোগকে পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে পাল্টা দাবি বিজেপি-র।
নিশিকান্ত খুন হয়েছিলেন ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে বাড়ি থেকে ফোন করে ডেকে এনে খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করা হয়। সে ঘটনার এত বছর বাদে আচমকাই এই খুনে শুভেন্দুকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের। তাঁর দাবি, ‘‘জমি আন্দোলনের হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন নিশিকান্ত মণ্ডল। তাই তাঁকে ঠেকাতেই খুন করা হয়েছিল। আর সেই খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের চিনতেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জেনেশুনেই অপরাধীদের আড়াল করেছেন।’’
এত বছর বাদে কেন এমন অভিযোগ? এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিজেপি নেতৃত্ব। গোটা ঘটনায় তাহেরই জড়িত বলে পাল্টা দাবি করেছেন তাঁরা। বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পালের পাল্টা দাবি, ‘‘প্রতি বছর নিশিকান্ত মণ্ডলের স্মরণসভার মূল পৃষ্ঠপোষক শুভেন্দু অধিকারী। আর নিশিকান্তর ছেলে সত্যজিৎ এখন বিজেপি-র সক্রিয় সদস্য। তাই পরিকল্পনা করেই মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন তাহের।’’
যদিও নিজের অভিযোগের সমর্থনে আবু তাহেরের মন্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়কার শুভেন্দু অধিকারী আজ কোথায়? এত দিন তিনি মানুষ খুনের রাজনীতি করেছেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে যত মানুষ খুন হয়েছেন তার জন্য শুভেন্দু অধিকারীই দায়ী!’’ তাঁর কথায়, ‘‘নিশিকান্ত মণ্ডল যখন খুন হন, সে সময় নন্দীগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু নিশিকান্ত খুনের পর তাঁর ফোন কেন পরীক্ষা করা হয়নি?’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ নিশিকান্তের মোবাইলে কয়েকটি ফোন এসেছিল। সেই ফোন পেয়েই তড়িঘড়ি মোটরবাইকে চেপে বাড়ি থেকে একাই বেরিয়ে আসেন নিশিকান্ত। সোনাচূড়া যাওয়ার মূল সড়কে ওঠার মুখে খুব কাছ থেকে নিশিকান্তকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। বুকে চারটি বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে নন্দীগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে আসার পর নিশিকান্তকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এই প্রশ্ন তুলে তাহেরের দাবি, ‘‘নিশিকান্তকে কে ফোন করে ডেকেছিল, তা খুঁজে বার করলেই অপরাধীদের সহজে চিহ্নিত করা যেত। অথচ ক্ষমতায় থেকেও শুভেন্দু তা করেননি।’’ তাহেরের কটাক্ষ, ‘‘শুভেন্দু কোনও দিন গুলি খেতে যাননি। তবে কেউ মরে গেলেই উনি মালা চড়াতে যান!’’
যদিও পুলিশ সূত্রের দাবি ছিল, খুনের ঘটনার কিছু পরেই লালগড়ে মাওবাদীদের নামে পোস্টারে দাবি করা হয়েছিল যে নিশিকান্ত মণ্ডলকে তারাই শাস্তি দিয়েছে। এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তিকে পাকড়াও করা হয়। যদিও তাহেরের অভিযোগ, ‘‘অন্য লোকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রমাণ করা হচ্ছে দোষীদের ধরা হয়েছে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। কে বা কারা নিশিকান্তকে খুন করেছেন, তা জানেন শুভেন্দু!’’
এই অভিযোগ উড়িয়ে প্রলয়ের পাল্টা দাবি, ‘‘তাহের যদি সবই জানতেন তবে এত দিন তিনি কেন চুপ ছিলেন? আসলে এই ঘটনায় তাহেরকেই পাকড়াও করে জেরা করা উচিত। তা হলেই নিশিকান্ত মণ্ডলের খুনের প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হবে"। প্রলয়ের আরও দাবি, ‘‘নিশিকান্তর পরিবার শুভেন্দুর সঙ্গেই রয়েছেন। তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই। তাহেরের অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’