তৃণমূলের সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আক্রমণ প্রতিহত করে কোন পথে পাল্টা আঘাত করতে হবে, জেলা সভাপতিদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে তার রূপরেখা বেঁধে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পরিকল্পনাই আরও বিশদে ছকে দিলেন দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়ক এবং জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সারলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র। বিজেপির ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে জোরকদমে পাল্টা প্রচারের নির্দেশ দিলেন। সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখেও জনসাধারণের পাশে আরও বেশি করে দাঁড়াতে বললেন দলীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের। আর পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর (পিকে) জোর দিলেন দ্রুত মানুষের ক্ষোভে প্রলেপ দেওয়ার উপরে।
এ দিনের ভিডিয়ো বৈঠকে তৃণমূলের সব সাংসদ ও বিধায়ককে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। যোগ দিতে বলা হয়েছিল জেলা সভাপতি এবং জেলা যুব সভাপতিদেরও। অভিষেক এবং পিকে ছাড়াও ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সীও। তবে মূল বার্তা এ দিন অভিষেকই দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচার শুরু করার উপরেই মূলত জোর দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি মিথ্যা প্রচার চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বদনাম করতে চাইছে, তা রাজ্যের মানুষকে বোঝাতে হবে— অভিষেক এই বার্তাই দিয়েছেন বলে খবর। গুজরাতের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি অনেক ভাল, তা সত্ত্বেও মিথ্যা বলে বাংলার দুর্নাম করার চেষ্টা হচ্ছে বলে তিনি বৈঠকে দাবি করেন। গুজরাত এবং বাংলার করোনা পরিস্থিতির হিসাব মানুষের সামনে তুলে ধরে দলকে প্রচারে নামতে নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: মদের দোকানে ভিড় হচ্ছে, আর বিপন্ন শ্রমিকদের বেলায় নিয়ম! প্রশ্ন দেবের
১৩ মে থেকে এই পাল্টা প্রচারের কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। প্রথম দফায় নামছেন ৫০ জন বিধায়ক। ভিডিয়ো কনফারেন্স এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিয়েই মূলত এই প্রচার হবে। গুজরাত এবং বাংলার তুলনামূলক ছবি তুলে ধরার পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যু নিয়েও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে তৃণমূল বিধায়কদের।
বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার যে শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন লকডাউনের জেরে, তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার যে যথেষ্ট কাজ করছে, সে কথা বোঝানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্য সরকার ফেরাতে চাইছে না বলে যে প্রচার বিজেপি চালাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে অভিষেক দাবি করেন। তাঁদের ফেরানোর জন্য রাজ্য সরকার কী স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করেছে, কী ভাবে ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা মানুষের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন যুব তৃণমূলের সভাপতি।
আরও পড়ুন: পরশু থেকে চালু দূরপাল্লার ট্রেন, আপাতত দিল্লি ও ১৫ শহরের মধ্যে
রেশন প্রসঙ্গও এ দিনের বৈঠকে উঠেছে বলে খবর। রেশন নিয়ে কারও যাতে অসুবিধা না হয়, সে দিকে সকলকে নজর রাখতে বলেছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ। মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা এবং এই সঙ্কটের পরিস্থিতিতে নানা ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যে জরুরি, সে কথাও অভিষেক মনে করিয়ে দিয়েছেন বলে খবর।
রাজ্য সরকারকে নানা ভাবে বিপাকে ফেলার জন্য বিজেপি বিভিন্ন রকম দাবিদাওয়া তুলছে, সেইগুলোকেই বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা হাতিয়ার করতে হবে— এই রকম রণকৌশলই আপাতত নির্ধারিত হয়েছে বলে খবর। বিজেপি বিদ্যুৎ বিল মকুবের দাবি তুলেছে, কেন্দ্র যদি রাজ্যের সব প্রাপ্য মিটিয়ে দেয় তা হলে বিদ্যুৎ বিল মকুব শুধু নয়, আরও অনেক কিছু করা যাবে— এই রকম কথাই প্রচারে তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কেন্দ্রের ‘বিমাতৃসুলভ আচরণ’ সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ৬৮টি কোভিড হাসপাতাল গড়েছেন, পিপিই-সহ বিভিন্ন সুরক্ষা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমানে দিয়েছেন, করোনার চিকিৎসায় কোনও সমস্যা নেই— এ কথাও প্রচারে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
ভোট কৌশলী তথা তৃণমূলের পরামর্শদাতা পিকে জোর দিয়েছেন মানুষের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টার উপরে। তৃণমূল সূত্রের খবর অন্তত তেমনই। অন্তত ১৫ হাজার লোকের সঙ্গে পিকের টিম কথাবার্তা বলেছে এবং তাতে ক্ষোভের আঁচ মিলেছে বলে খবর। কিন্তু তাতে চিন্তার কিছু নেই, লকডাউনে দীর্ঘদিন মানুষ ঘরবন্দি, অনেকেরই কাজকর্ম নেই, উপার্জন নেই, সুতরাং ক্ষোভ জন্মানো স্বাভাবিক— বুঝিয়েছেন পিকে। এই পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং ক্ষোভে প্রলেপ দিতে হবে, ভোট-গুরুর পরামর্শ এমনই বলে জানা গিয়েছে।