অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, লোকসভার ফলাফল দেখে সাংগঠনিক এবং পুরসভা স্তরে প্রশাসনিক রদবদল হবে। তৃণমূলে সেই আনুষ্ঠানিক রদবদল এখন সময়ের অপেক্ষা। তবে ইতিমধ্যেই বীরভূমের সংগঠনে ‘অভিষেক মডেল’ বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে। যা দেখে তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই মনে করছেন, বাকি জেলাগুলিতেও ওই মাপকাঠিতেই রদবদল হবে।
বীরভূমের জেলা সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। গরু পাচার মামলায় তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরেও তাঁর সেই পদ যায়নি। দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত সম্পর্কে যা যা বলেছিলেন, তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁকে একই বন্ধনীতে ফেলছে না দল। অনেকের ধারণা ছিল, জামিনে মুক্ত অনুব্রত আগের মতোই জেলা সংগঠনের রাশ নিজের হাতে নিয়ে নেবেন। কিন্তু দেখা গেল, জেলা সভাপতি পদে তাঁকে রাখলেও অনুব্রতকে কোর কমিটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, কোর কমিটিই লোকসভা ভোট করেছিল। এবং বীরভূমের দু’টি আসনই তৃণমূল জিতেছে। তা-ও গত বারের চেয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে।
গত ৭ নভেম্বর অভিষেক একান্ত আলোচনায় জানিয়েছিলেন, তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ মত হল, বীরভূমে কোর কমিটি থাকুক। সে ক্ষেত্রে অনুব্রতের ভূমিকা কী হবে, সেই প্রশ্নে অভিষেকের বক্তব্য ছিল, কোর কমিটিকে পরিচালনা করবেন অনুব্রত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, অনুব্রত অতীতে যে ঢঙে সংগঠন চালাতেন, সেই ব্যবস্থাই কার্যত তুলে দেওয়া হল। কোর কমিটিই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‘অধিকারী’ হয়ে গেল। তবে অনুব্রতকে সেই কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। যার নেপথ্যে অভিষেকের সাংগঠনিক নকশার ছাপই দেখছেন দলের অনেকে।
জেলার রাজনীতির প্রেক্ষিতে এই বিষয়টিকে অনেকে অনুব্রতের ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত কাজল শেখের ‘ক্ষমতাবৃদ্ধি’ হিসাবে দেখছেন অনেকে। যদিও কাজল বলেছেন, ‘‘কেষ্টদা আমার রাজনৈতিক গুরু। আমরা সবাই মিলে বীরভূমে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করব।’’ তৃণমূলে সকলেই জানেন, অভিষেকের রাজনৈতিক দর্শন হল, হয় ‘পারফর্ম’ করো, না হয় পদ ছাড়ো। সেই দর্শন থেকেই বীরভূমে কোর কমিটি মডেল রেখে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন তিনি। কারণ, সাংগঠনিক যে কাঠামো অনুব্রত-হীন বীরভূমে দু’টি আসন জিতিয়েছে, ব্যবধান বাড়িয়েছে, এখন যদি সেই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়, তা হলে ‘ভুল বার্তা’ যাবে। তা ছাড়া, অনুব্রত না-থাকায় জেলার রাজনীতির পুরনো সমীকরণও বদলে গিয়েছে। একদা যাঁরা ‘অনুব্রতের লোক’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন, তাঁরাও অন্য নেতাদের অনুগামী হয়ে রাজনীতি করেছেন গত দু’বছর। অনুব্রতের পুরনো যে বাহিনী ছিল সংগঠনে, তাও ভেঙে গিয়েছে। ফলে অনুব্রতকেই নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে অভিষেক জানিয়েছিলেন, লোকসভায় যেখানে যেখানে খারাপ ফল হয়েছে, সেই সমস্ত পুর এলাকায় প্রশাসনিক স্তরে ‘রদবদল’ হবে। সেই সূত্রে কমবেশি ৭০টি পুরসভা ও পুরনিগমে (আপাতত বাদ থাকছে কলকাতা) চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে রদবদল হতে পারে। অভিষেক এ-ও জানিয়েছেন যে, অক্টোবরে আমেরিকা যাওয়ার আগেই তিনি নেত্রী মমতার কাছে রদবদল সংক্রান্ত তাঁর প্রস্তাব দিয়ে গিয়েছিলেন। উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হলেই সেই রদবদলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে দেওয়া হতে পারে। বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি পদেও রদবদল হবে বলে অভিষেক জানিয়েছেন। তবে সেই রদবদলে শুধু লোকসভার ফল ‘সূচক’ না-ও হতে পারে। বয়স বা শারীরিক কারণেও কয়েকটি বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মৌলিক মাপকাঠি যে লোকসভার ফল, তা বীরভূমে কোর কমিটির ক্ষমতাবৃদ্ধিই প্রমাণ করে দিয়েছে।