—ফাইল চিত্র।
সাত মাস হল দু’জনের বাক্যালাপ বন্ধ। মুখোমুখি দেখা হয়নি কম করে আটমাস। সোমবার ঘটনাচক্রে একে অপরের সামনে চলে এলেন দু’জন। কিন্তু অদৃশ্য বরফের দেওয়াল ভাঙল কি?
সেই জানুয়ারিতে রাজভবনের বারান্দায় একসঙ্গে বসেছিলেন দু’জন। মাঘ মাসের ঠান্ডা তখন কলকাতায়। দু’জনের একান্ত বৈঠকের পর ঘটা করে ঘোষণা করা হয়েছিল, ‘‘রাজ ভবন আর বিকাশ ভবনের মধ্যে আর দ্বন্দ্ব নয়, এ বার দুই ভবন শুধুই সমন্বয়ের পথে চলবে।’’ কিন্তু তার পর বাংলায় ঋতু বদলেছে। বসন্ত পেরিয়ে এসেছে খর গ্রীষ্ম, স্যাঁতসেতে বর্ষা। বদলেছে সেই বৈঠকে দেখা দু’টি মানুষের রসায়নও।
দেখা সাক্ষাতে ছেদ পড়েছিল আগেই। মার্চের শেষ থেকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর ফোন ধরাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। ‘অপমান’ চুপচাপ হজম করেননি শিক্ষামন্ত্রীও। সুযোগ পেলেই পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। ‘সাদা হাতি’ থেকে ‘রাক্ষস’, ‘ভ্যাম্পায়ার’ থেকে ‘হিটলার’, এমনকি, তুঘলকি শাসকও বলেছেন রাজ্যপালকে। সেই আক্রমণেরও জবাব এসেছে রাজভবন থেকে। শিক্ষামন্ত্রীর পদ নিয়ে কটাক্ষ করে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, তিনি ‘জুনিয়র’ কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করবেন না। এই পরিস্থিতিতে সোমবার দেখা হল দু’জনের। প্রায় মুখোমুখি। এক ছাদের নীচে বসলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
রাজভবনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে চিঠির বান্ডিল হাতে ব্রাত্য বসু। — নিজস্ব চিত্র
রাজ ভবনের বাইরে ধর্নারত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সোমবার বিকেলে সাক্ষাতের সময় দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। ৩০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে অভিষেক পৌঁছন রাজ ভবনে। সেই দলে ছিলেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদেরা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও ছিলেন সেই দলে। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা বলা চিঠির বান্ডিল কাঁধে দীর্ঘ আট মাস পর রাজভবনের ফটক পেরিয়ে ঢুকলেন ব্রাত্য। রাজ্যপালের সঙ্গে নিজেদের দাবি জানাতে। ঠিক কীরকম ছিল সেই সাক্ষাৎ?
ডান দিকের সারিতে সাত নম্বর আসনে বসে আছেন ব্রাত্য। — নিজস্ব চিত্র
রাজ ভবনের সাজানো ড্রয়িং রুমে বসার ব্যবস্থা হয়েছিল প্রতিনিধি দলের। কার্পেট বিছানো লম্বাটে হলের এক প্রান্তে ছিল রাজ্যপালের বসার ব্যবস্থা। প্রতিনিধিদের জন্য চেয়ার পাতা হয়েছিল তাঁর আসনের দু’ধারে সারিবদ্ধ ভাবে। ব্রাত্যর বসার ব্যবস্থাও হয়েছিল সেখানেই। রাজ্যপাল থেকে তাঁর দূরত্ব ছিল ঠিক সাতটি চেয়ারের। রাজ্যপালের পাশের চেয়ারটি ছিল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পর ফিরহাদ হাকিম। ওই সারিরই সাত নম্বর আসনে বসেছিলেন ব্রাত্য। খুব দূরে নয়। আবার কাছেও নয়।
প্রায় আধঘণ্টার বৈঠকের পর বেরিয়ে আসেন ব্রাত্যরা। তাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজ্যপালের সঙ্গে আলাদা করে কোনও কথা হল কি? জবাব ব্রাত্য শুধু একটি শব্দ বলেছেন।
‘‘না’’।