Mamata Banerjee Abhishek Banerjee

রাজ্যসভার প্রার্থী নিয়ে শলা করতে কলকাতায় ফিরেই মমতার বাড়িতে অভিষেক, ঘোষণা হতে পারে বুধবার

বাংলা থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার পাঁচ সাংসদ শান্তনু সেন, নাদিমুল হক, আবিররঞ্জন বিশ্বাস, শুভাশিস চক্রবর্তী এবং অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মেয়াদ ফুরোচ্ছে। এ বার একটি আসন বাঁধা রয়েছে বিজেপির।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩২
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

মঙ্গলবার কলকাতায় ফিরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে অভিষেকের। তার পরে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ নিজের বাড়ির অফিসে চলে যান।

Advertisement

কিন্তু দু’জনের মধ্যে কী নিয়ে কথা হয়েছে সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউই কিছু জানাননি। তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, রাজ্যসভা ভোটের প্রার্থী নিয়ে দু’জনের কথা হয়েছে। রাজ্যের পাঁচটি রাজ্যসভা আসন ফাঁকা হচ্ছে। বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে চারটি পাবে তৃণমূল। একটিতে বিজেপি মনোনীত প্রার্থী জিতবেন। মঙ্গলবার সেই তালিকা নিয়েই দু’জনের পরামর্শ হয়েছে। তৃণমূলের এক শীর্ষ সূত্রের দাবি, চারটি আসনেই নতুন প্রার্থী দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। নাম ঘোষণা হতে পারে বুধবার।

তৃণমূলের অনেকের বক্তব্য, রাজ্যসভার প্রার্থিতালিকা নিয়ে মমতা-অভিষেকের আলোচনা ‘অর্থবহ’। কারণ, সম্প্রতি দু’জনের মধ্যে ‘শৈত্য’ নিয়ে দলের অন্দরে জল্পনা এবং আলোচনা শুরু হয়েছিল। অভিষেক জানিয়ে দিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটে তিনি তাঁর নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের বাইরে যাবেন না। মঙ্গলের আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই ‘বরফ’ গলার কাজ শুরু হলে বলেই অনেকে মনে করছেন। অন্য দিকে, দলের অন্য একাংশের বক্তব্য, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের মতামত না-নিয়ে এবং তাঁর সঙ্গে আলোচনা না-করে রাজ্যসভার প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চাননি দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা। যার মাধ্যমে তিনি অভিষেককেও ‘বার্তা’ দিলেন যে, দলীয় সংগঠনে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে মমতার পরে তিনিই দু’নম্বর। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটে অভিষেক রাজ্য জুড়ে ‘সক্রিয়’ হবেন। শুধু ডায়মন্ড হারবারে নিজেকে আবদ্ধ রাখবেন না। তবে এ সবই সময়ের গর্ভে। আপাতত মঙ্গলবারের আলোচনা নিয়েই জল্পনা চলছে।

Advertisement

রাজ্যসভার মনোনয়ন পেশ করা শুরু শুক্রবার। চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তার পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করারও শেষ দিন ২০ ফেব্রুয়ারি। ‘বারবেলাজনিত কারণে’ সাধারণত বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তরফে কোনও দলীয় কর্মসূচি নেওয়া হয় না। রইল পড়ে বুধবার। ফলে সে দিনই প্রার্থীদের নাম ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি। যাঁরা রাজ্যসভায় প্রার্থী হবেন, তাঁদের নানাবিধ নথিপত্রের প্রয়োজন হয়। সে সব প্রস্তুত করারও বিষয় রয়েছে। একটি সূত্রের দাবি, প্রার্থীদের আগে থেকে নথিপত্র প্রস্তুত করতে বলে দেওয়া হয়েছে। একাধিক নাম নিয়ে জল্পনা চলছে। তবে সংখ্যালঘু এবং তফসিলি প্রার্থীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সপ্তাহ দেড়েক আগে বীরভূমের নেতাদের নিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠক করেছিলেন মমতা। সে দিন অভিষেক ওই বৈঠকে ছিলেন না। তিনি ছিলেন তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে। সে দিন মমতা দলের নেতাদের জানিয়েছিলেন, অভিষেককে অনেক কিছু ‘ড্রাফ্‌ট’ করতে হচ্ছে, নথি তৈরি করতে হচ্ছে। তাই তিনি বৈঠকে ছিলেন না।

বাংলা থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার পাঁচ সাংসদ শান্তনু সেন, নাদিমুল হক, আবিররঞ্জন বিশ্বাস, শুভাশিস চক্রবর্তী এবং অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মেয়াদ ফুরোচ্ছে। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের এখন যা সম্পর্ক, তাতে মনু সিঙ্ঘভির পুনরায় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আবার এ-ও ঠিক যে, মনু সিঙ্ঘভি সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার এবং অভিষেকের আইনজীবী। তবে এ বার একটি আসন বিজেপির জন্য নিশ্চিত।

রেড রোডে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে অভিষেকের না থাকা নিয়ে শাসকদলের মধ্যে আলোচনা এবং জল্পনা রয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে তৃণমূলের ধর্না শুরু হয়েছে। প্রথম দু’দিন মমতা সেই মঞ্চে ছিলেন। তার পর থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠন ধর্না চালাচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত এক দিনও তৃণমূলের ‘সেনাপতি’কে সেই মঞ্চে দেখা যায়নি। তার আগেই অবশ্য অভিষেক সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। বাজেটের দিন নতুন সংসদ ভবনে তৃণমূলের সংসদীয় দলের ঘরে সাংসদদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথাও বলেছিলেন তিনি।

তবে মমতার ধর্নামঞ্চে অভিষেকের অনুপস্থিতি নিয়ে শাসকদল তো বটেই, রাজনৈতিক মহলেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে গত কয়েক মাস ধরে চলা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ‘মতানৈক্য’। গত ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন দুই শিবিরের নেতাদের বাগ্‌যুদ্ধ সপ্তমে পৌঁছেছিল। বছর পয়লার দিনেও অভিষেকের সঙ্গে মমতা দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন কালীঘাটের বাড়িতে। তার পর কয়েকটি জেলার বৈঠকে মমতার বাড়িতে অভিষেক উপস্থিত ছিলেন। ২২ জানুয়ারি কলকাতায় মমতার ডাকা সংহতি মিছিলেও হেঁটেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। পার্ক সার্কাসের মঞ্চে বক্তৃতাও করেছিলেন। যাকে অনেকেই বরফ গলার লক্ষণ বলে উল্লেখ করেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেছিলেন, সবটাই উপর উপর। মৌলিক যে যে বিষয় নিয়ে মতানৈক্য ছিল তা রয়েই গিয়েছে। তার পরে কিন্তু মমতার আহূত ধর্নায় অভিষেককে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে ওই কর্মসূচি চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যদি তার মধ্যে অভিষেক কোনও একদিন ধর্নামঞ্চে যান, তা হলে ঘটনার মোড় ঘুরে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement