ডায়মণ্ড হারবার পুলিশ জেলার উদ্বোধনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। শনিবার রাজ্য পুলিশের ডিজির উপস্থিতিতে এই বার্তাই দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পৈলানে ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশের নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনি। সেখানে ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় ও পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের সামনেই অভিষেক বলেন, ‘‘যেখানে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করার দরকার, সেখানে ডানদিকে বা বাঁদিকে তাকানোর দরকার নেই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। কোনওরকম অপরাধের ঘটনা যেন না ঘটে।’’
ঘটনাচক্রে, শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হয়েছে নদিয়ার তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার আপ্তসহায়ক-সহ তিন জন। সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্যের দুর্নীতিদমন শাখা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি থেকে বিধায়কের আপ্তসহায়ক প্রবীর কয়াল ও তার দুই সঙ্গী শ্যামল কয়াল আর সুনীল মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতিদমন শাখা। সম্প্রতি চাকরি দেওয়ার নাম করে ১৬ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের কাছে তিনটি অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে একটি চিঠি দেওয়া হয় পলাশিপাড়া বিধানসভা এলাকা থেকে। অন্য দু’টি তেহট্ট এবং করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগ জানানো হয়েছিল তেহট্টের বিধায়ক তাপসের বিরুদ্ধেও। অভিষেক শনিবার বলেন, ‘‘রাজ্য প্রশাসনের প্রত্যেককর্তা, রাজ্য সরকারের সর্বস্তরের প্রতিনিধি ও কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছেন, দলমত নির্বিশেষে ব্যবস্থা নিতে হবে। সে যত বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই যুক্ত থাকুক না কেন। যত বড় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকুক না কেন। যদি কেউ ভাবে কোনও দুর্ঘটনা বা অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে, তা হলে সে ভুল ভাবছে।’’
শনিবারের অনুষ্ঠানে অভিষেক বলেন, “প্রশাসনকে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। একটিও ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। পুর এলাকা, পঞ্চায়েত এলাকা—সর্বত্র এই নজরদাবি চালাতে হবে পুলিশকে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। মনে রাখবেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সুদীপ্ত সেনের মতো অপরাধীকে কাশ্মীরের কার্গিল প্রান্ত থেকে ধরে এনে জেলে ঢোকাতে পারে, তাহলে আপনি সুন্দরবন থেকে কোচবিহার, যেখানেই পালান, ২৪ ঘণ্টা লাগবে প্রশাসনের আপনাকে জেলে ঢোকাতে। যাঁরা ভাবছে যে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে না, আমি আঙুল দিয়ে দিয়ে এক একটা ঘটনা দেখাতে পারি যেখানে প্রশাসন কাজ করেছে। তাই অপরাধীরা নিশ্চিন্তে থাকবে পারবে না।’’
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘অভিষেকের বার্তা থেকেই স্পষ্ট যে, দলের নেতারাও যদি দুর্নীতি করেন সে ক্ষেত্রে প্রশাসন কড়া হাতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আর তেহট্টের ঘটনা তো সে দিকেই ইঙ্গিত করছে।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল। অস্থায়ী ভাবেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েই পুলিশ সুপারের অফিস চলত। কিন্তু এসপি অফিসের নিজস্ব কোনও ভবন ছিল না। জাতীয় সড়ক থেকে এসপি অফিসের দূরত্ব বেশি হওয়ায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজনের কিছুটা অসুবিধা হত। সাংসদের তৎপরতায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রচেষ্টায় এই নতুন কার্যালয়টির নির্মাণ করা হয় বলে জানান অভিষেক। পূর্ত দফতরের জায়গায় এই নতুন কার্যালয়টি তৈরি হয়েছে। পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটককেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ অভিষেক। নতুন এই কার্যালয়ে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত সুপার-সহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন আধিকারিকের অফিস ছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক মানের কনফারেন্স হল, জিম সেন্টার এবং ব্যাডমিন্টন কোর্ট। শনিবার জেলা পুলিশের নতুন এই কার্যালয় উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন এডিজি(দক্ষিণবঙ্গ) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, জেলাশাসক পি উলগানাথন, রাজ্যের পরিবহণ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল-সহ বিধায়ক, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ আধিকারিকরা।