অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
এনফোর্সনেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এ অযোগ্য লোকজন থাকাটা হতাশাজনক। তাঁরা অনুগ্রহকারীদের তুষ্ট করতে সংবাদমাধ্যমে নিয়ম করে মনগড়া গল্প ছড়াচ্ছেন। আমেরিকা থেকে এই ভাষাতেই টুইট করে তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে আক্রমণ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিষেকের রক্ষাকবচের মামলায় গত শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, অনুমানের উপর ভিত্তি করে তদন্ত করা যায় না। এর পরেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
চোখের চিকিৎসার জন্য এখন আমেরিকায় অভিষেক। রবিবার ইনস্টাগ্রামের ‘স্টোরি’তে নিজস্বী পোস্ট করেন অভিষেক। ছবির সঙ্গে অভিষেক লেখেন, ‘‘ব্রাইট সানি সানডে মর্নিং ইন নিউইয়র্ক।’’ সোমবার আমেরিকা থেকে অভিষেক টুইট করেছেন ইডিকে বিঁধে। তিনি লিখেছেন, ‘‘এনফোর্সনেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এ অযোগ্য লোকজনের উপস্থিতি সত্যিই হতাশাজনক। অনুগ্রহকারীদের তুষ্ট করতে সংবাদমাধ্যমে নিয়ম করে মনগড়া গল্প ছড়ানোর অতুলনীয় প্রতিভা রয়েছে তাঁদের। কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক যে, তদন্তের নামে বছরের পর বছর ধরে করদাতাদের অর্থ নষ্ট করার পরেও তাঁরা আদালতে উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করতে পারেন না। দেশের সেবা করার যে কর্তব্য তাঁদের দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিও তাঁরা অবহেলা করেন। আর সেটা প্রমাণিত হয় মামলার নিষ্পত্তি করে দোষী প্রমাণিত করার পরিসংখ্যানে। ফলে আমরা এতে আর আশ্চর্যও হই না যে, কেন ইডির দোষী সাব্যস্ত করার হার মাত্র ০.৫ শতাংশ!’’ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের মতো ইডি এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশ আমার বিরুদ্ধে খোলাখুলি নানা অভিযোগ তুলছে। এঁদের মতো দুর্ভাগাদের জন্য সহানুভূতি জাগে।’’
চোখের চিকিৎসার জন্য আমেরিকা গিয়ে সেখান থেকে অভিষেক কেন ইডিকে এমন আক্রমণ শানালেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে নানা ব্যাখ্যা। গত শুক্রবার নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিষেকের রক্ষাকবচের মামলা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের পর্যবেক্ষণ ছিল, অনুমানের উপর ভিত্তি করে তদন্ত করা যায় না। বিচারপতির বক্তব্য, ইডি দাবি করছে দুর্নীতি হয়েছে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার। কিন্তু তারা নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছ থেকে মাত্র ২.৯ অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘সব কিছুই কল্পনার উপর দাঁড়িয়ে আছে।’’ হাই কোর্টের বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণের আবহে অভিষেকের এ হেন বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে চার মাস পর সোমবারেই সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছেন রাহুল গান্ধী। অনেকের মতে, সেই ঘটনাকে সামনে রেখেও ইডিকে নিশানা করতে পারেন অভিষেক। টুইটে তিনি ‘এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের’ কথা লিখলেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার বা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নাম করেননি কোথাও। তবে ইডি ‘অনুগ্রহকারীদের সেবা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় আগামী ৮ অগস্ট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখের অস্ত্রোপচার করানোর কথা লেখা হয়েছিল। সেটি ভুল। চোখের চেক-আপের জন্য আমেরিকায় গিয়েছেন অভিষেক। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।)